ডাক্তারের অভাব, ক্যানসার পরিষেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে মেডিক্যাল – Anandabazar Patrika

কলকাতা নিউজ

রাজ্যের অন্যতম সেরা বলে পরিচিত এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি। এমনকি, সেখানে একই ছাদের নীচে ক্যানসারের যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে আসার জন্য তৈরি হচ্ছে বহুতল। এমনিতেই সেখানে আসেন ক্যানসারে আক্রান্ত বহু রোগী। কিন্তু তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক পাওয়াই দুষ্কর হয়েছে বলে অভিযোগ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবস্থাটা এখন কার্যত এমনই।

Advertisement

লোকাভাবের কারণে রোগীর চাপে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা ক্যানসার-মেডিসিন এবং ক্যানসার শল্য চিকিৎসা বিভাগে থাকা হাতে গোনা কয়েক জন চিকিৎসকের। জানা যাচ্ছে, ওই দু’টি বিভাগ মিলিয়ে মাত্র তিন জন শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন। আবার সিনিয়র রেসিডেন্টও রয়েছেন নামমাত্র। তার ফলে কখনও কেমোথেরাপির জন্য এসে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। কিংবা তাঁরা অস্ত্রোপচারের তারিখ পাচ্ছেন দেড় মাস পরে। রোগীর পরিজনেরা বলছেন, ‘‘ডাক্তারই তো নেই! যে ক’জন আছেন, তাঁরা আর কত করবেন? এত বড় হাসপাতালে আরও ডাক্তার থাকা উচিত ছিল।’’ প্রশ্ন হল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো জায়গায় এমন হাল কেন? স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, অন্যত্র যেখানে ক্যানসারের পরিষেবা চালু হয়েছে, সেখানে মেডিক্যাল থেকেই চিকিৎসক পাঠানো হয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘মিলিয়ে-মিশিয়ে সব জায়গাতেই তো পরিষেবা চালু রাখতে হবে। না হলে এত চিকিৎসক পাওয়া যাবে কোথা থেকে?’’

যদিও একই ছাদের তলায় ক্যানসার সংক্রান্ত যাবতীয় পরিষেবা নিয়ে আসার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের পাশেই একটি বহুতল গড়ে তোলা হচ্ছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘ওখানে পরিষেবা সচল রাখতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক দেওয়া হবে।’’ যদিও সেটি কবে, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। যেমন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো জায়গায় চিকিৎসক-সঙ্কট কেন থাকবে, তারও কোনও যথাযথ উত্তর মেলেনি। বরং জানানো হয়েছে, যে মানবসম্পদ ইতিমধ্যেই রয়েছে, সেটিকে সর্বাগ্রে ঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে।

সূত্রের খবর, ওই হাসপাতালের অঙ্কোলজি মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক দীর্ঘ দিন ধরে ছুটিতে। অগত্যা কাজ চালাচ্ছেন এক জন শিক্ষক-চিকিৎসক। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দু’জন সিনিয়র রেসিডেন্ট। সেখানেও একটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এ দিকে, ওই বিভাগে সপ্তাহে বুধ ও শনিবার বহির্বিভাগ চলে। অর্থাৎ মাসে আটটি বহির্বিভাগের দিনে রোগী হয় হাজারের কাছাকাছি। আবার ওই বিভাগের অধীনেই সপ্তাহে চার দিন ‘ডে-কেয়ার’ পরিষেবা চলে। অর্থাৎ মাসে ১৬ দিনে প্রায় ১০০০ জন রোগী আসেন কেমোথেরাপির জন্য। ওই ডে-কেয়ারে শয্যা রয়েছে আটটি। সম্প্রতি ওই ডে-কেয়ার কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা গেল, অপেক্ষায় রয়েছেন অনেক রোগী। ভিতরে শয্যা কম থাকার জন্যই অপেক্ষা করতে হয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

জানা যাচ্ছে, ক্যানসার-মেডিসিন বিভাগে ২০টি শয্যা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে সাত-আট জন করে সেখানে ভর্তি হন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘পরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয়, তার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে কাজ করা হয়। যেমন, যাঁর সমস্যা মারাত্মক, তাঁকে যে দিন দেখা হল, সে দিনই কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। আর যাঁর সমস্যা কম, তাঁকে পরে নির্দিষ্ট দিনে আসতে বলা হয়।’’ শোচনীয় অবস্থা ক্যানসার শল্য চিকিৎসা বিভাগেও। সেখানে এক জন বিভাগীয় প্রধান ও আর এক জন শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন। ওই বিভাগেও সপ্তাহে দু’দিনের বহির্বিভাগে ৪০-৫০ জন করে রোগী আসেন। সূত্রের খবর, আগে যখন পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন, তখন সপ্তাহে তিন দিন মিলিয়ে অন্তত ৯-১০টি করে অস্ত্রোপচার হত। এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৪-৫টিতে। ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেলা স্তরের মেডিক্যাল কলেজে ক্যানসারের চিকিৎসার সুযোগ নেই। তাই শহরের মেডিক্যাল কলেজে রোগীর ভিড় বেশি। সেখানে অনেক ক্যানসার চিকিৎসককে প্রত্যন্ত হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁদের মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসে আসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’’

তবে কলকাতা মেডিক্যালের এক কর্তা বলেন, ‘‘নতুন ক্যানসার ব্লক তৈরি হচ্ছে, যাতে রোগীরা সুসংহত ভাবে আরও উন্নত মানের পরিষেবা পান। চিকিৎসক কম থাকার বিষয়টিও স্বাস্থ্য ভবনের নজরে রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের
Google News,
Twitter এবং
Instagram পেজ)

Source: https://news.google.com/__i/rss/rd/articles/CBMirwFodHRwczovL3d3dy5hbmFuZGFiYXphci5jb20vd2VzdC1iZW5nYWwva29sa2F0YS9jYWxjdXR0YS1tZWRpY2FsLWNvbGxlZ2UtYW5kLWhvc3BpdGFsLWlzLXN0cnVnZ2xpbmctdG8tcHJvdmlkZS1mYWNpbGl0aWVzLXRvLWNhbmNlci1wYXRpZW50cy1kdWUtdG8tbGFjay1vZi1kb2N0b3JzL2NpZC8xNDAzMjIz0gGzAWh0dHBzOi8vd3d3LmFuYW5kYWJhemFyLmNvbS9hbXAvd2VzdC1iZW5nYWwva29sa2F0YS9jYWxjdXR0YS1tZWRpY2FsLWNvbGxlZ2UtYW5kLWhvc3BpdGFsLWlzLXN0cnVnZ2xpbmctdG8tcHJvdmlkZS1mYWNpbGl0aWVzLXRvLWNhbmNlci1wYXRpZW50cy1kdWUtdG8tbGFjay1vZi1kb2N0b3JzL2NpZC8xNDAzMjIz?oc=5