কলকাতার ইহুদি স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী মুসলিম ছেলেমেয়েরা! – মানবজমিন

কলকাতা নিউজ

(৩ ঘন্টা আগে) ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার, ২:২০ অপরাহ্ন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহরে এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে দুটি ইহুদি স্কুল। একটি পার্ক স্ট্রিটে অবস্থিত ইহুদি মেয়েদের বিদ্যালয় বা ‘জিইউশ গার্লস স্কুল’, অন্যটি বউবাজারে ছেলেদের বিদ্যালয় ‘ইলিয়াস মেয়ার ফ্রি স্কুল তালমাড অ্যান্ড তোরাহ্‌’। দুটি স্কুল কর্তৃপক্ষেরই দাবি, ইহুদিদের স্কুল হলেও সেখানকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মুসলিম এবং তাদের এ নিয়ে কোনদিন কোনরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানাচ্ছেঃ ইলিয়াস মেয়ার ফ্রি স্কুল তালমাড অ্যান্ড তোরাহ্‌ ১৮৮১ সালে বাগড়ি মার্কেটে ফায়ার টেম্পলের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ১৯২৫ সালে এটি বউবাজারের ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়। স্কুলটির পরিচালক রুবেন অ্যারন বলেন, “একদম প্রথম থেকেই এই স্কুল ইহুদি ছেলেদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু, গত প্রায় ৪০-৫০ বছর ধরে আমরা এখানে সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের ছেলেদেরকেই ভর্তি করছি।”

এমন সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা কর‍তে গিয়ে রুবেন বলেন, “প্রথমত ইহুদি ছেলেদের সংখ্যা কমে আসছিল, এই স্কুলে এবং কলকাতা শহরেও। শিক্ষার্থী না পেয়ে একটা স্কুল উঠে যাবে এটাতো ঠিক নয়। তাই আমাদের এতো পুরনো একটা স্কুলকে চালানোর জন্য পরিচালনা সমিতি সিদ্ধান্ত নেয় যে অন্য ধর্ম আর সম্প্রদায়ের ছেলেদেরও আমরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেব।”

এভাবে ইহুদিদের স্কুলটি টিকে গেলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, কলকাতায় ইহুদিদের সংখ্যা কমতে থাকায় প্রভাব পড়েছে স্কুলেও। রুবেন জানান, ১৯৯১ সালের পর থেকে এই স্কুলে আর কোনও ইহুদি ছেলে ভর্তি হয়নি। স্কুলের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “এই স্কুলে এখন ৪৮০-৫০০ জন ছাত্র পড়ে এবং অধ্যক্ষকে নিয়ে মোট ৩৩ জন শিক্ষক আছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রত্যেক বছরই এই স্কুল থেকে বোর্ডের পরীক্ষায় ভাল ফল হয়। এখান থেকে পড়ে অনেকে আইনজীবী হয়েছে, আইপিএস হয়েছে।”

ধর্মীয় ভেদাভেদের কারণে কোনো সমস্যা হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে রুবেন বলেন, “এর কোনও প্রভাবই আমাদের ওপর এসে পড়েনি। স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্র মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও সেরকম কোনও অসুবিধা হয়নি।”

মুসার্‌রত পারভিন নামে স্কুলটির জনৈক অভিভাবক বলেন, “স্কুলটা খুব ভালো। এখানে পড়াশোনা খুব ভালো হয়। পড়াশোনার কথা ভেবেই আমার ছেলেদের এখানে ভর্তি করিয়েছি। অন্য কোন ব্যাপারে চিন্তাও করিনি। আমার একটা ছেলে ক্লাস টুয়েলভ পাশ করে বেরিয়েছে, একজন ইলেভেনে আছে আর একজন ক্লাস ফাইভে পড়ছে।”

জিউইশ গার্লস স্কুল-এর কোষাধ্যক্ষ ব্রায়ান অকল্যান্ডও প্রায় একইরকম কথা বলেন, ” বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫০০ জন ছাত্রী এবং ৩৫-৪০ জন ফ্যাকাল্টি রয়েছেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের আলাদা করে জুডাইজম পড়ানো বা সেরকম প্রভাব ফেলে এমন কোনও কার্যকলাপ হয় না। শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা আমাদের এই দুটো স্কুলে পড়াশোনা করে। এখনও যদি কোনও ইহুদি ছেলে বা মেয়ে আমাদের এই স্কুলগুলোতে পড়তে আসে তাহলে তার জন্য আমরা বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারি।”

Source: https://mzamin.com/news.php?news=19988