কলকাতার কড়চা: জীবন জুড়ে জলযন্ত্রণা – Anandabazar Patrika

কলকাতা নিউজ

মরুগান

মরুভূমির ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত পশ্চিম রাজস্থানের আত্মা। বাড়মের, জয়সলমের, জোধপুর, বিকানের শুধু মরুভূমি, দুর্গ ও প্রাসাদের জন্যই বিখ্যাত নয়, সুপরিচিত লাঙ্গা, মাঙ্গানিয়ার এবং মীর জনগোষ্ঠীর লোকসঙ্গীতের জন্যও। বাংলার ঘরে বসেই সেই মরুর গান শোনার সুযোগ, বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে গুগল আর্টস অ্যান্ড কালচার-এর সঙ্গে বাংলানাটক ডট কম-এর গাঁটছড়ায়। ‘আর্টস অ্যান্ড কালচার ডট গুগল ডট কম’-এ গিয়ে ‘পার্টনার/বাংলানাটক’ ক্লিক করলেই দেখা যাবে রাজস্থানের চার জেলার ১৫০ জন শিল্পীর পরিবেশনা— তিনটি ডিজিটাল প্রদর্শনীতে, ছবি ও অডিয়ো-ভিডিয়োয় মরুভূমির সমৃদ্ধ লোকসঙ্গীত-ঐতিহ্য। দেখা ও শোনা যাবে নানা বাদ্যযন্ত্র— সিন্ধি সারেঙ্গি, কামাইচা, খরতাল, অ্যালগোজা, ঢোল, মোরচাং, মুরলী। লোকসঙ্গীতের এই ঐতিহ্যবাহী ধারাকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে তরুণ প্রজন্ম, জানা যাবে তা-ও। এর আগে বাংলার পটচিত্র, ছৌ নাচ, মাদুর শিল্প, দোল নিয়েও অনলাইন প্রদর্শনী করেছে বাংলানাটক ডট কম।

মননের আলো

২১ জুন কি ‘শুধু গানের দিন’ই? গান নিয়ে চর্চা আর লেখালিখির মধ্য দিয়ে সে চর্চার একটা নান্দনিক ও বৌদ্ধিক রূপ ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস করেছে কলকাতার ‘সূত্রধর’ প্রকাশনা। সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে তাদের তিনটি বই— রাধাকান্ত নন্দীর তবলার বোল, তবলিয়ার বুলি, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের রবীন্দ্রসংগীত আর সুধীর চক্রবর্তীর বাংলা সংগীতচিন্তার নবজন্ম। লেখকদের নিয়ে আলাদা করে দু’কথা বলার দরকার পড়ে না, সঙ্গীত ও তার শিক্ষণ-জগতে প্রত্যেকেই স্বনামধন্য, বিভিন্ন কালপর্বে বাংলার সঙ্গীত-ঐতিহ্য ও ইতিহাসের দিগ্‌দর্শকও তাঁরা। মননের আলো দীপ্ত হয়ে উঠেছে ভাষা ও ভাবের সারল্যে। ছোট্ট বইগুলি, কিন্তু গভীর।

পুরাতাত্ত্বিক

১৯৬২ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরাতত্ত্বে স্নাতকোত্তর, পরে আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে জন ডি রকফেলার ফেলোশিপ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজ়িয়োলজি বিষয়ের প্রথম পিএইচ ডি ছাত্র তিনিই, সমীর মুখোপাধ্যায় (১৯৩৯-২০২১)। দীর্ঘ কর্মজীবনে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব ও সংগ্রহশালাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ছিলেন, বিভাগের উদ্যোগে বাংলার নানা স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর। লিখেছেন বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ, প্রাচীন ভারতীয় মৃৎশিল্প বিষয়ে তাঁর কাজ আদৃত দেশে-বিদেশে। গত ১২ জুন চলে গেলেন সুবক্তা, ছাত্রদরদি এই ইতিহাসবিদ অধ্যাপক।

সিনে-বাংলা

নাচঘর, খেয়ালী, দীপালী, চিত্রলেখা— বিশ শতকের প্রথম দিকে উঠে এল বহু চলচ্চিত্র পত্রিকা, সাময়িকী। দেশ, মাসিক বসুমতী-তে জুড়ল বায়োস্কোপ-চর্চাও। নায়িকাদের আলোকচিত্রে হলিউডি ছায়া, ভারতীয় চিত্রকলারও আবেশ। গ্রেটা গার্বোর প্রেমজীবন, ‘নকশা’য় রঙিন মার্লিন ডিট্রিচ। দেশে তখন নট-নটী থেকে ছায়ানট-ছায়ানটী হয়ে নায়ক-নায়িকায় উত্তরণের পর্ব। প্রাক্-স্বাধীনতার বাংলার সিনে-চর্চার আলোয় পত্রপত্রিকায় ফিল্ম অভিনেত্রীর পরিচিতি নির্মাণ, লিঙ্গচেতনা নিয়ে বললেন স্পন্দন ভট্টাচার্য, যদুনাথ ভবন মিউজ়িয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার-এর ‘আর্কাইভাল টক সিরিজ়’-এ, গত ২১ জুন। ফেসবুকে এই বক্তৃতা সিরিজ়ের পরের পর্ব ২৮ জুন, বিকেল ৪টেয়। বাঙালির ছবি দেখা ও যৌনতার গণ্ডি নিয়ে বলবেন বিজলীরাজ পাত্র।

ঐতিহ্যের তীরে

নগরসভ্যতার বিকাশ নদীর পাড়ে, কলকাতা যেমন হুগলি নদীতীরে। অতীতে যে নদীতে বাণিজ্যতরী আসত, সে গঙ্গা আজ পরিত্যক্ত আদিগঙ্গা। আর্মেনিয়ানরা ১৭৩৪-এই তৈরি করেন ঘাট, পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে গড়ে ওঠে চাঁদপাল ঘাট, জগন্নাথ ঘাট, একাধিক গুদামঘর। স্থানীয়দের চাঁদায় তৈরি হয় প্রিন্সেপ ঘাট, রাজচন্দ্র দাস তৈরি করান বাবুঘাট, হাটখোলা ঘাট। নানা সময়ের মানচিত্রে ঠাঁই পাওয়া কলভিনস ঘাট, পুলিশ ঘাট আজ বিলুপ্ত বা বিস্মৃতপ্রায়। ইউরোপীয় স্থাপত্যের স্বাক্ষরবহ ঘাটগুলি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় সমাবেশেরও মিলনস্থল। এই সব স্থাপত্যে বিধৃত শহরের নদীভিত্তিক ইতিহাস— যার অনেকাংশ রক্ষিত কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের মিউজ়িয়ামে— জানা গেল গত ১৮ জুন, হুগলিতীরের ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপত্য বিষয়ে জাতুরং পোখারাতসিরি, সঙ্ঘমিত্রা বসু, গৌতম চক্রবর্তী ও রংগন দত্তের আন্তর্জাল-আলোচনায়। আয়োজক পুণের ‘লিভিং ওয়াটার্স মিউজ়িয়াম’। ছবিতে বন্দরের অন্নপূর্ণা ঘাট, ২০১৯ সালে সংস্কারের পরে।

Source: https://www.anandabazar.com/west-bengal/kolkata/kolkata-remains-under-stagnant-water-for-almost-one-week/cid/1289201