‘বাঙালি’ সৌমেনকে কলকাতার সিপি করে নির্দিষ্টবার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা – Anandabazar Patrika

কলকাতা নিউজ

সোমবার সকালে লালবাজারে গিয়ে যখন অনুজ শর্মার কাছ থেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন সৌমেন মিত্র, তখন তার পাশাপাশিই একটি সচেতন বার্তা গেল জনমানসে। বার্তাটি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার সারমর্ম— কলকাতার প্রধান প্রশাসকের পদে এক বাঙালি অফিসার। আপাতদৃষ্টিতে কিছুই নয়। আবার তলিয়ে দেখলে এই বাঙালি-অবাঙালি ভোটের আবহে একাধারে অনেককিছু।

প্রথমত, কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে বহু বছর পর এক বাঙালি আইপিএস। তথ্য বলছে, সৌমেন পাঁচবছর আগে একবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদে ছিলেন বটে। কিন্তু তা একেবারেই সাময়িক।সেই অর্থে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে শেষ বাঙালি আইপিএস ছিলেন গৌতমমোহন চক্রবর্তী। তাঁর ঠিক আগে ছিলেন প্রসূন মুখোপাধ্যায়।তাঁরও আগের বাঙালি ছিলেন সুজয়কুমার চক্রবর্তী, তুষার তালুকদার, বীরেন সাহা প্রমুখ। এ ছাড়া বাকি সময়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদে থেকেছেন মূলত অবাঙালি অফিসাররাই। বিদায়ী পুলিশ কমিশনার অনুজের আগে কমিশনার ছিলেন রাজীব কুমার। সে অর্থে, বেশকিছু বছর পর এক বাঙালি অফিসারের হাতে কলকাতা শহরে সুরক্ষার দায়িত্ব বর্তাল। প্রসঙ্গত, সৌমেন প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। কৃতী ছাত্রও বটে। তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পাওয়ায় এক প্রবাসী চলচ্চিত্র পরিচালক পুলকিত হয়ে ফেসবুকে মস্তবড় পোস্ট লিখেছেন। সেটি কোনও সূচক হয়ে থাকলে বলতে হবে, সৌমেনের পদপ্রাপ্তিতে খুশি ‘এলিট’ বাঙালি।

দ্বিতীয়ত, পাঁচ বছর আগে সৌমেনকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে বসিয়েছিল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ, তিনি ছিলেন সুষ্ঠ এবং অবাধ ভোট করাতে কমিশনের ‘প্রতিনিধি’। তাঁর নিয়োগের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও সম্পর্ক ছিল না। এবার ভোটের আগে তাঁকে সেই পদে নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিজেই। প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, এতদ্বারা মমতা প্রমাণ করেছেন, তিনি ‘রাজধর্ম’ পালন করেছেন। পুলিশ-প্রশাসনের সকলেই জানেন, পাঁচ বছর আগের সেই নির্বাচনকালে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) মন্ত্রী মমতার সঙ্গে সৌমেনের সম্পর্ক ততটা ‘মসৃণ’ ছিল না। কারণ, তিনি ছিলেন কমিশনের প্রতিনিধি। বস্তুত, ২০১৬ সালের আপাত-কঠিন ভোটে মমতা তথা তৃণমূল বিপুল সংখ্যাধিক্য নিয়ে জিতে আসার পর রাজীবকে আবার কলকাতা পুলিশ কমিশনার পদে ফিরিয়ে এনেছিলেন মমতা। আর সৌমেনকে বেশ কিছুদিন ‘বাধ্যতামূলক অপেক্ষা’য় কাটাতে হয়েছিল। প্রশাসনিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘কম্পালসরি ওয়েটিং’। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক অফিসার চাকরিতে থাকলেও তাঁর কোনও পদ বা কাজ থাকবে না। তবে কিছুদিন পর সৌমেনকে আবার রাজ্যপুলিশের একটি পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

Source: https://www.anandabazar.com/west-bengal/kolkata/by-appointing-soumenmitra-as-cp-kolkata-mamata-banerjee-has-sent-a-signal-dgtl/cid/1265546