কলকাতা থেকে কনিয়াক যেত বামাক্ষ্যাপার জন্যে! – the oldest liquor store in kolkata | EiSamay Gold – এই সময়

কলকাতা নিউজ

মদ শব্দটা নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল কলকাতায় ঊনবিংশ শতকের সম্ভবত শেষ প্রতিনিধি রাধাপ্রসাদ গুপ্তের। রাধাপ্রসাদ গুপ্ত ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যদিও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। আক্ষরিক অর্থেই রাধাপ্রসাদ গুপ্ত ওরফে সাঁটুল বাবু হচ্ছেন বাবু কলকাতার শেষ উত্তরসূরি।

এখন যত রাম, হুইস্কি বা বিয়ারের রমরমা, একশো দেড়শো বছর আগে কলকাতায় তার মোটেও কদর ছিল না। তখন মদ যেটুকু যা পাওয়া যেত সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পরে কলকাতায় রাম হুইস্কির চল শুরু হল। বিশ্বযুদ্ধের সময় সময় আমেরিকান সেনাদের দৌলতে বিয়ার, হুইস্কি জনপ্রিয় হতে থাকে। যুদ্ধের সময় এক বোতল হুইস্কির দাম ছিল তখনকার চার, পাঁচ টাকায়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তা বেড়ে সতেরো আঠেরো টাকা হয়ে গেল। বিয়ার তখনও তিন, চার টাকা বোতল। এখন যে মোহনমিকিন্স, আদিতে তার নাম ছিল ডায়ারমিকিন্স। সেই এ দেশে বিয়ারের জনপ্রিয় হওয়ার আসল কারিগর। খুব শস্তায় সে নিয়ে এল বিয়ার। তখন তার নাম ছিল সোলান পেলতল।

তা যাকগে যাক, হচ্ছিল মদ নিয়ে কথা, চলে এলাম রাধাপ্রসাদ গুপ্তের চর্চায়। আসলে কী ভাবে, কেমন করে যেন নীল রক্তের সঙ্গে অতি তুচ্ছ আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। সময় পেলেই চলে যেতাম তাঁর ফ্ল্যাটে। আর তখনই নানা বিষয়, মদ থেকে বাঈ নাচ, শহরের অলিগলি সব নিয়ে তুমুল আলোচনায় মেতে উঠতেন সাঁটুলদা। সে রকমই এক আড্ডায় উনি সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন যে, মদকে মদ বললে তা কেমন যেন সুন্দরী ফুরফুরে এক তরুণীকে মাগী বলার মতো বিশ্রী শোনায়। বরং দামি ফরাসি মদকে মদিরা বা সুপেয় বলে ডাকা ভালো ।

তখনই জেনেছিলাম, মদ একটা পুরোদস্তুর সংস্কৃতি। তার শুধু নন্দনতত্ত্ব নয়, কাব্য গাথাও রয়ে গেছে বঙ্গ-সংস্কৃতিতে।

কলকাতায় প্রাচীন তিনটে মদের দোকান আজও চলছে। রমরমিয়ে চলা ওই তিনটে দোকান হচ্ছে কলামন্দিরের কাছে পার্সি ডি সোরাবজির, বৌবাজারের জিসি শ’, আর শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে, ঠিক নীলরতন সরকার হসপিটালের উল্টো দিকের ইউ জিন অ্যান্ড কোম্পানি। তিনের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীন ইউ জিন। এক ফরাসি ব্যবসায়ী দোকানটি খুলেছিলেন ১৮৫৭সালে। মনে রাখবেন, সে বছরেই কিন্তু সিপাই বিদ্রোহে কেঁপে উঠেছিল সারা ভারত। শোনা যায়, বামা ক্ষ্যাপার ভক্তরা কেউ কেউ গুরুর জন্য ইউ জিন থেকে কনিয়াক নিয়ে যেতেন। তখনকার বাজারে এক বোতলের দাম ছিল পাঁচ টাকা। মদের দোকান বলে শুচিবায়ুগ্রস্ত হয়ে ছি ছি করার আগে মনে রাখবেন এও কিন্তু কলকাতা শহরের ইতিহাসের অঙ্গ। এই ইতিহাসের পরতে পরতে রয়েছে সাবেক দিনের নানা সামাজিক আখ্যান। শরৎ পণ্ডিত, দাদাঠাকুর কবেই বলে গেছেন, ‘বর্ণনা করিব বল হেন সাধ্য কার। আছো তুমি সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলিতে, তব গুণ এক মুখে পারি কি বলিতে’।

ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যখন কথা বলি তখনও মদের দোকান নিয়ে কথা বলা ভিক্টোরিয়ান রুচিবোধে এতটাই আটকায় যে, মদ-সংস্কৃতি কোনও দিনই বাবু ভদ্দরলোকদের চর্চার বিষয় নয়। ভুল বললাম। বলা যায়, প্রকাশ্যে চর্চার যোগ্য নয়। ঋত্বিক ঘটকের মদ খাওয়া নিয়ে কত আদিখ্যেতা, অথচ ভবানীপুরে যে দোকানে বসে উনি দিনের পর দিন পান করতেন তার নামও ঋত্বিক গবেষকেরা ভুলেও উল্লেখ করেন না। মূলত কমলকুমার মজুমদারের দৌলতে খালাসিটোলা নিয়ে তবু কিছু আহ্লাদ বাংলা সাহিত্যে পাই। কিন্তু মেট্রোর ছোট ব্রিস্টল বা লাল বাজারের ব্রিটিশ সময়ের অজস্র ছোটখাট শুঁড়িখানা যে কোনও রকমে কী ভাবে টিকে আছে, ইতিহাসের খাতিরেও তা জানতে চাই না।

Source: https://eisamay.indiatimes.com/eisamaygold/vacation/the-oldest-liquor-store-in-kolkata/story/80667531.cms