কলকাতা থেকে ভোমরা হয়ে ৬ ঘণ্টায় ঢাকায় – Bangla Tribune

কলকাতা নিউজ

আগামী ২৫ জুন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর স্থলপথে সংযোগ স্থাপন হচ্ছে। একইসঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে তৈরি হচ্ছে সামাজিক-অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে বদলে যাবে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের চিত্র। স্থলপথে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাড়বে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। ভারতের কলকাতার সঙ্গে কমবে দূরত্ব, বাঁচবে সময়।

পাশাপাশি ভোমরা স্থলবন্দরে তৈরি হবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান। অবকাঠামোর উন্নয়ন হবে দ্বিগুণ। আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছে গেলে উৎপাদন খরচ কমে যাবে। বাজারে পণ্যের দাম কমবে। এ জন্য আশায় বুক বেঁধেছেন ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক এবং আমদানি-রফতানিকারকরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. আলাউদ্দীনের প্রচেষ্টায় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় ভোমরা স্থলবন্দর। বর্তমানে বন্দরে আমদানি-রফতানি কাজে জড়িত পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। প্রতিদিন বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায় দাঁড়ায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। বাসন্তী হাইওয়ে হয়ে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা থেকে ভোমরায় পৌঁছে পণ্যবাহী ট্রাক। দূরত্ব কম হওয়ায় বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সময় লাগে কম। 

অপরদিকে, ঢাকার সঙ্গে ভোমরার দূরত্ব ৩০৫ কিলোমিটার। হিসাবে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৭৫ কিলোমিটার। খুলনা মহাসড়ক হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। মাঝে মধ্যে এর চেয়ে বেশি সময় লাগে। দুর্যোগকালীন ফেরি না পাওয়ায় নদীর পাড়ে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে আমদানি পণ্য নষ্ট হয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা।

u09b8u09cdu09a5u09b2u09aau09a5u09c7 u09adu09beu09b0u09a4u09c7u09b0 u09b8u0999u09cdu0997u09c7 u09acu09beu0982u09b2u09beu09a6u09c7u09b6u09c7u09b0 u09acu09beu09dcu09acu09c7 u0986u09aeu09a6u09beu09a8u09bf-u09b0u09abu09a4u09beu09a8u09bf u09acu09beu09a3u09bfu099cu09cdu09af</span></span>”}”>

পদ্মা সেতু চালুর পর কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দর হয়ে মাওয়া দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার দূরত্ব হবে ৩৩০ কিলোমিটার। খুলনা-গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে গেলে দূরত্ব কমবে ৪৫ কিলোমিটার। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে আগে যেখানে লাগতো ১০-১২ ঘণ্টা এখন লাগবে ছয় ঘণ্টা। সড়কপথে সময় বাঁচবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। ফেরিঘাটের দুর্ভোগ আর থাকবে না। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ ও পণ্যবাহী যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে সহজে ঢাকায় পৌঁছাবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকার সঙ্গে ভোমরার দূরত্ব ৩০৫ কিলোমিটার। হিসাবে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৭৫ কিলোমিটার। খুলনা মহাসড়ক হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। মাঝে মধ্যে এর চেয়ে বেশি সময় লাগে। এখন দূরত্ব কমায় ছয় ঘণ্টায় কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছাবে পণ্যবাহী ট্রাক। সাতক্ষীরার সবজি, ফল ও মাছ দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। ফলে অর্থনীতির চাকা পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।’

ভোমরা স্থলবন্দরের ট্রাকচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব কম হওয়ায় এই পথে বেশি কাঁচামাল আসে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতে নদী পার হওয়ার দুর্ভোগ কখনও ভুলতে পারবো না। মাওয়া-জাজিরায় পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে ফেরিতে দুই-তিন ঘণ্টা সময় লাগে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় সময় লাগে দুই ঘণ্টা। এর চেয়ে বড় সমস্যা হলো ঘাটে গিয়ে ফেরিতে উঠার নিশ্চয়তা নেই। সময়মতো ফেরি পাওয়া যায় না। ফেরি না পাওয়ায় নদীপাড়ে কেটে গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ঝড়, বর্ষা, নদীর স্রোত, কিংবা ঘন কুয়াশায় পদ্মাপাড়ে কেটেছে দিনরাত। সময়মতো বাড়িতে পৌঁছাতে পারিনি। অনেক সময় নদীপাড়ে কিংবা রাস্তায় কেটেছে ঈদ। এসব স্মৃতি কখনও ভুলবো না। পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ।’

ভোমরা স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দরে প্রতিদিন আমদানি-রফতানির কাজের সঙ্গে যুক্ত পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন ও শ্রমিক মিলে ২০ হাজার মানুষ বন্দরে কাজ করেন। বর্তমানে আমদানিকৃত পণ্য ভোমরা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। বেশিরভাগ সময় এর চেয়ে বেশি সময় লাগে। দুর্যোগকালীন ফেরি না পাওয়ায় নদীর পাড়ে কেটে যায় দিনের পর দিন। ফলে আমদানিকৃত পণ্য নষ্ট হয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। আবার ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পেরে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যায় না।’

u09aau09a6u09cdu09aeu09be u09b8u09c7u09a4u09c1 u099au09beu09b2u09c1 u09b9u09b2u09c7 u09adu09beu09b0u09a4u09c7u09b0 u0995u09b2u0995u09beu09a4u09beu09b0 u09b8u0999u09cdu0997u09c7 u0995u09aeu09acu09c7 u09a6u09c2u09b0u09a4u09cdu09ac, u09acu09beu0981u099au09acu09c7 u09b8u09aeu09df</span></span>”}”> পদ্মা সেতু চালু হলে ভারতের কলকাতার সঙ্গে কমবে দূরত্ব, বাঁচবে সময়

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর এই দুর্ভোগ লাঘব হবে। আমদানিকৃত পণ্য ঢাকায় পৌঁছে যাবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টায়। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমদানি-রফতানিতে খরচ কমে আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পদবিষয়ক সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘এই অঞ্চলের রোগীদের ঢাকায় নেওয়ার পথে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। রোগীর মৃত্যু হতো ফেরিঘাটে। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকায় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হবে এ অঞ্চলের মানুষের।’

জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহিম বলেন, ‘সাতক্ষীরা অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নবঞ্চিত। কৃষিতে সমৃদ্ধশালী হয়েও কেনাবেচা ও যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় অনেক কৃষিপণ্য পচে যেতো। পদ্মা সেতু চালু হলে সব ধরনের সুবিধা পাবেন কৃষকরা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ‘পদ্মা সেতুটি আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল। সেতু চালু হলে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ভারত থেকে ভোমরা বন্দর হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য আনা-নেওয়া করতে কম সময় লাগবে রফতানিকারকদের।’

ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, ‘কলকাতা থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে রয়েছে ভোমরা স্থলবন্দর। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিতে আগ্রহ কম ছিল ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিন ভারত থেকে ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে আসে। পদ্মা সেতু চালু হলে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য পাঁচ-ছয় ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাবে। বর্তমানে ফেরি পার হয়ে ঢাকায় যেতে সময় লাগছে ১০-১২ ঘণ্টা। কখনও কখনও এর চেয়েও বেশি সময় লাগে। কাঁচামাল পচে যায়। এতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। এখন আর পচবে না। পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ কেটে যাবে।’

u09adu09beu09b0u09a4 u09a5u09c7u0995u09c7 u0986u09aeu09a6u09beu09a8u09bfu0995u09c3u09a4 u09aau09a3u09cdu09af u09a6u09cdu09b0u09c1u09a4 u09b8u09aeu09dfu09c7 u09a2u09beu0995u09beu09df u09aau09ccu0981u099bu09c7 u0997u09c7u09b2u09c7 u0989u09ceu09aau09beu09a6u09a8 u0996u09b0u099a u0995u09aeu09c7 u09afu09beu09acu09c7</span></span>”}”> ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছে গেলে উৎপাদন খরচ কমে যাবে

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, ‘শুধুমাত্র ভোগান্তির কারণে ভোমরা বন্দর ব্যবসায়ীদের কাছে তেমন একটা গুরুত্ব পেতো না। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে গতি আসবে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে। বন্দরের কিছু উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। এখানে কাস্টমস হাউস প্রয়োজন। সেটি হলে সব পণ্য আমদানি-রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে।’

ভোমরা স্থলবন্দরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দরে আমদানি-রফতানি বাড়বে। রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে। সময় বাঁচবে, গড়ে উঠবে শিল্পায়ন ও উৎপাদনমুখী ব্যবসাকেন্দ্র। পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থ বাঁচবে। বদলে যাবে স্থলবন্দরের দৃশ্যপট। কমবে পণ্যজট।’ 

তিনি বলেন, ‘কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব কম হওয়ায় পদ্মা সেতু চালুর পর আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সম্প্রসারিত হবে বাণিজ্য। ভারত-বাংলাদেশে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। অন্যান্য দেশেরও বাংলাদেশে বাণিজ্যে আগ্রহ বাড়বে। বর্তমানে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে ৫০-১০০ ট্রাক। এতে দৈনিক রাজস্ব আদায় হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা।’

Source: https://www.banglatribune.com/%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A7%81/749936/%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A7%8B%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A7%AC-%E0%A6%98%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A7%9F