Kolkata water Land Scam: রাতারাতি পুকুর চুরি! জমি মাফিয়া থেকে সরকারি প্রকল্প, জলাশয় বুজিয়েই চলছে… – TV9 Bangla

কলকাতা নিউজ

কলকাতার বুকে একের পর এক জলাশয় বুজিয়ে চলছে আবাসন প্রকল্পের কাজ

Kolkata water Land Scam: কলকাতার বুকে একের পর এক জলাশয় বুজিয়ে চলছে আবাসন প্রকল্পের কাজ। এমনকী, সরকারি প্রকল্পের কাজেও বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে পুকুর।

কলকাতা: এ যেন হযবরল। এই ছিল বেড়াল হয়ে গেল রুমাল! শহর কলকাতার বুকেই রমরমিয়ে চলছে জমি মাফিয়াদের দাপট। আর তার জেরে মহানগরের বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জলাশয়। আর এই জমি মাফিয়াদের পিছনে প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের হাত রয়েছে, এমনটাই অভিযোগ। একের পর এক ভেড়ি, পুকুর জলাশয় বুজিয়ে চলছে বহুতল আবাসন গড়ার কাজ। শুধু তাই নয়, কোথাও তো জলাশয় বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে সরকারি প্রকল্পও।

১৫ বছর আগে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অন্তর্গত ন্যাশনাল অ্যাটলাস অ্যান্ড থিম্যাটিক ম্যাপিং অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে কলকাতার জলাশয় সংক্রান্ত একটি প্রতিবেগন প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছিল তারও ২০ বছর আগের তথ্য। সেই তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ বছর আগে শহর কলকাতায় জলাশয়ের সংখ্যা ছিল ৮,৭৩১ টি। আর বর্তমানে কলকাতা পুরসভার রিপোর্ট অনুযায়ী জলাশয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৫০০ টি। অর্থাৎ, ৩৫ বছরে হারিয়ে গিয়েছে ৫,২৩১ টি জলাশয়। আরও জানা যাচ্ছে গত ৫ বছরেই উধাও হয়ে গিয়েছে প্রায় ৪০০০ জলাশয়। কোথায় গেল সেগুলি?

আনন্দপুরের হোসেনপুর এলাকার এক অভিজাত আবাসনের গা ঘেসেই রয়েছে এক বিরাট খাটাল। কলকাতা শহরে খাটাল নিষিদ্ধ হলেও, প্রায় শ’খানেক গরু-মোষ নিয়ে রমরমিয়ে চলে এই খাটাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে প্রায় কয়েক বিঘে ভেড়ি বুজিয়ে দিয়ে তৈরি হয়েছে ওই খাটাল। খাটালের পাশে এখনও সামান্য অস্তিত্ব রয়ে গিয়েছে ভেড়ির। খাটালটি আগে আনন্দপুরের ভিতরের দিকে ছিল। কিন্তু, সেই জমিতে এখন বহুতল তৈরি হয়েছে। তারপরই, খাটাল মালিকরা ওই এলাকায় ভেড়ি বুজিয়ে খাটাল তৈরি করেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এই খাটালের জেরে ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা। একে খাটালের যাবতীয় আবর্জনা গিয়ে মিশছে ভেড়ির জলে। মশা-মাছির জ্বালায় অতিষ্ট এলাকাবাসী। ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ক্রমে বাড়ছে। পাশাপাশি ভেড়ি এলাকা হওয়ায় বর্ষাকালে পুরো এলাকাটি ডুবে যায়। ওই দুর্গন্ধ, আবর্জনাময় জল পেরিয়েই সকলকে যাতায়াত করতে হয়। তার থেকেও অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে।

এলাকার কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের দাবি, খাটালটিকে সেখানে রাখার পিছনে কোনও কায়েমি স্বার্থ কাজ করছে। নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে খাটালটিকে সেখানে বহাল রাখা হয়েছে। কলকাতায় খাটাল নিষিদ্ধ হওয়ায়, প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে যে, এলাকাটি কলকাতা পুরসভা এলাকারই নয়। তাঁর আরও দাবি, ওই খাটাল যারা বসিয়েছে, তারা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নয়। তারা আদতে বিহারের বাসিন্দা। ওই এলাকাতেই আনন্দপুর থানা হলেও, পুলিশও ঠুটো হয়ে রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ থানায় অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কাউন্সিলরও মেনে নিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে যথেষ্ট তৎপরতা দেখানো হয়নি।

Anadapur Wetland Scam

গত ৫ বছরেই অন্তত ৪০০০-এর বেশি জলাশয় উধাও

আরও ভয়ঙ্কর ছবি পূর্ব পঞ্চান্ন গ্রামে। এখানকার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে শুধু যে পুকুর বুজিয়ে কোটি কোটি টাকার আবাসন গড়ার কাজ চলছে, তা নয়। জমি মাফিয়াদের থাবা পড়েছে এলাকার বাসিন্দাদের ভিটেমাটিতেও। প্রকল্প এলাকার বাইরে রয়েছে বিশাল পাঁচিল। সেই পাঁচিল তোলা হয়েছে কখনও কোনও বাসিন্দার ঘর, পাঁচিল ভেঙে দিয়ে। কখনও আবার এমনভাবে পাঁচিল দেওয়া হয়েছে যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা পর্যন্ত পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। অসুস্থ হয়ে পড়লে রোগীকে স্ট্রেচারে বা হুইল চেয়ারে বের করার কোনও উপায় নেই।

এত কিছুর পরও মুখে কুলুপ আঁটতে বাধ্য হয়েছেন স্থানীয়রা। কেন? বাসিন্দারা বলছেন, ‘ওরা গুণ্ডা, পয়সাওয়ালা লোক। ওদের সঙ্গে আমরা পারব না।’ কারা ওরা? শোনা যায় মুন্না ও মনোহরের নাম। অভিযোগ, তারা শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার লোক। আর তাঁর মদতেই রাতারাতি বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে জলাশয়। বিনা প্রতিরোধে রাতারাতি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এলাকাবাসীর ঘর, পাঁচিল।

এই খবরটিও পড়ুন

তবে শুধু জমি মাফিয়াদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। মুকুন্দপুরের লালন মঞ্চ এলাকায় জলাশয় বুজিয়ে চলছে সরকারি প্রকল্পের কাজও। বর্ষার জল জমার যন্ত্রণা লাঘবে তৈরি করা হচ্ছে তৈরি হচ্ছে পাম্পিং স্টেশন। খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রকল্পের উদ্বোধন হওয়ার কথা ২০২৩-এ, কাজ চলছে পুরোদমে। ফলে, জলাশয়টি এখন প্রায় নিশ্চিহ্নই হয়ে গিয়েছে। জলাশয় বুজিয়ে এই প্রকল্পের কাজ করা হলেও, সরকারের দাবি এতে সাধারণ মানুষের লাভই হবে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন আর কি কোনও জায়গা ছিল না? প্রকল্পের উদ্বোধনের সময়, বিকল্প পুকুরের আশ্বাস দিয়েছিলেন মন্ত্রী। তবে, তার দেখা এখনও মেলেনি। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে উন্নয়ন কি সত্যি সত্যিই উন্নয়ন? প্রশ্ন উঠবেই।

Source: https://tv9bangla.com/kolkata/kolkata-water-land-scam-waterbodies-lost-due-to-land-mafias-govt-project-au63-559827.html