কলকাতার কড়চা: শহরের বিচিত্র ইতিকথা – Anandabazar Patrika

কলকাতা নিউজ

উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে কলকাতায় ঘটে গেল এক নিঃশব্দ বিপ্লব। শোলায় চকমকি ঠুকে আগুন জ্বালানোর ঝক্কি থেকে মুক্তি দিল দেশলাই। কলকাতার রাস্তায় ‘লে দেশলাই’ হেঁকে বিলিতি দেশলাই ফেরি হত। আবার “নমানি বিলাতি অগ্নি দেশলাইরূপী/ চাঁচাছোলা দেহখানি শিরে কালো টুপি” লিখে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সেই দেশলাইকেই রূপকার্থে ব্যবহার করে বিদ্রুপ ছুড়ে দিলেন অকর্মণ্য দেশীয় ডেপুটিবাবুদের উদ্দেশে, বঙ্কিমচন্দ্র যাদের বলেছিলেন ‘কুষ্মাণ্ড’।

Advertisement

আশপাশের বহু জনপদের থেকে তুলনায় নবীন শহর কলকাতার ইতিহাস নিয়ে লেখা কম হয়নি। ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে সেই গুরুত্ব প্রত্যাশিতও। সাহেবি কলমে সেই কাজ শুরু হয়, পরে এগিয়ে আসেন বাঙালিরাও। সাহেবদের লেখায় শাসক-কথার স্বাভাবিক বাহুল্য ও এদেশীয়দের অনুপস্থিতির অভাব অনেকটাই পূরণ হয় বাঙালির কলকাতা-কথনে। উদাহরণ, ১৮৭৫ সালের বাংলায় ভোটরঙ্গের গল্প। কর্পোরেশনের করদাতাদের ভোটে প্রথম নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন কমিশনাররা। ব্যালট পেপার বা আঙুলে কালির বালাই নেই। ভোটার এসে দাঁড়াচ্ছেন, সোজা প্রার্থীর দিকে আঙুল তুলে পছন্দ নির্দেশ করে চলে যাচ্ছেন। প্রার্থী রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়কে ভোট দিয়ে রসিক ভোটার ছড়া কাটছেন, “আমার পছন্দ ওই খৃষ্ট ভেকধারী/ সাপোর্টে দিলাম ভোট, জিতি বা হারি।” অন্য দিকে শহরের গর্ব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ চিকিৎসার পরিষেবা শুরুর সময় সোমপ্রকাশ পত্রিকার মন্তব্য, এই সূতিকাগৃহে অধিকাংশ স্ত্রীলোক অপগর্ভজাত সন্তানদের প্রসব করাতেই আসেন এবং সদ্যোজাত শিশুটিকে সেখানেই বিক্রির ব্যবস্থা করে বাড়ি ফেরেন!

ইতিহাসবিদরা তো বটেই, কলকাতার ইতিহাসে আলো ফেলছেন নানা পেশার মানুষ। ফলে শহরের সামাজিক ইতিহাসের একটি সমৃদ্ধ ভান্ডার তৈরি হয়েছে, যা থেকে কলকাতার সামাজিক বিবর্তনের ধারা বোঝা যায়, আন্দাজ মেলে ভাবী গতিপথেরও। এই ধারাতেই শহুরে সামাজিক ইতিহাসের কিছু দিক-আঙ্গিক তুলে ধরেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক তিলক পুরকায়স্থ, কলিকাতা: সেকালের গল্প একালের শহর (প্রকাশক: কলিখাতা) বইয়ে। এ বইয়ে উনিশ ও বিশ শতকের কলকাতার হেঁশেল, শহরবাসীর পান তামাক মদের নেশা, ছোট ট্রেন ও ট্রামের গল্প, চিকিৎসা ব্যবস্থা-সহ নানা বিষয়, এ শহরের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, চিনা বা আর্মেনীয়দের কথাও। সান্দর্ভিক গবেষণাকর্ম নয়, তবু কলকাতা-চর্চার দৃষ্টিকোণ থেকে সারবান উদ্যোগ। গত বছর নভেম্বরে বইটির প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল, কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিন তলায় বইচিত্র সভাঘরে দ্বিতীয় খণ্ডের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল গতকাল, ৪ নভেম্বর। ছবিতে ১৯৪৪-এ গ্লেন হেন্সলির তোলা আলোকচিত্রে ন্যারোগেজ রেলের আলিপুর স্টেশন, ট্রেন থেকে নেমে কাজে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

জীবন-কথক

Advertisement

কমিউনিস্ট পার্টি তখন নিষিদ্ধ, মুজফ্ফর আহমেদ আত্মগোপনে তাঁদেরই মাটির বাড়ির দোতলায়— সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের (ছবি) পিতা ছিলেন পার্টির মুর্শিদাবাদ শাখার সহপ্রতিষ্ঠাতা; মা বিচিত্রা, সওগাত পত্রিকার নিয়মিত লেখিকা। সাঁওতাল বন্ধু কালিয়া শিখিয়েছিল বাঁশি বাজানো, কৈশোরে পলাতক সিরাজকে আলকাপ দলে ঠাঁই দিল সে সুর। রাঢ় বাংলার প্রান্তজীবনের বহুবর্ণ অভিজ্ঞতা… তারই নির্যাস মায়ামৃদঙ্গ, অলীক মানুষ, কত লেখায়! তাঁর গোয়েন্দা চরিত্র কর্নেল ও ইন্সপেক্টর ব্রহ্ম রহস্যভেদের পাশাপাশি বুঝতে চেয়েছে প্রকৃতি ও জীবনেরও অর্থ। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ৯৩তম জন্মদিন উপলক্ষে সভা হল গতকাল ৪ নভেম্বর রোটারি সদনে, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ আকাদেমির উদ্যোগে। বললেন সুমিতা চক্রবর্তী রামকুমার মুখোপাধ্যায় অভিজিৎ সেন ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সিরাজ আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হলেন ভগীরথ মিশ্র।

অনন্ত আনন্দধারা

৮ নভেম্বর সমাগত, সুবিনয় রায়ের জন্মদিন। গত বছর পেরিয়েছে তাঁর জন্মশতবর্ষ (জন্ম ১৯২১)। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সমাদৃত শিক্ষক তিনি, রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী ও সুরের ওতপ্রোত রসায়ন ধারণ করেছিলেন গলায়। প্রশিক্ষক হিসাবে তাঁর দক্ষতা ও উপস্থাপনার যশোগাথা প্রসারিত হয়েছিল বাংলা, ভারত এমনকি বিদেশের বহু রবীন্দ্রসঙ্গীতোৎসাহী ছাত্রছাত্রীর কাছে। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে সর্বভারতীয় সঙ্গীত ও সংস্কৃতি পরিষদ, গীতবিতান, সৃষ্টি পরিষদ এবং রবীন্দ্রতীর্থের সম্মিলিত উদ্যোগ— ৬, ৭ ও ৮ নভেম্বর তিন দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান: ‘অনন্ত সঙ্গীত আনন্দধারা’। রবীন্দ্রতীর্থে উদ্বোধন আগামী কাল বিকেল সাড়ে ৫টায়, পরের দুই সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান যথাক্রমে রামমোহন মঞ্চ ও গীতবিতান-এ। ভাষণ, স্মৃতিচারণের পাশাপাশি একক ও সমবেত সঙ্গীত, বিশিষ্ট শিল্পী-কণ্ঠে।

অন্য চোখে

গব্বর সিংয়ের লোক রামগড় লুঠ করতে এসে চমকে গেছে। গ্রামবাসী এমন খাতিরযত্ন করেছে যে তাদের বন্দুক কাজ করেনি, উল্টে গান শুনে গোটা দল অবশ বিবশ। রিপোর্ট পেয়ে সর্দারের মাথা গরম। হোলির দিন গব্বর ঠাকুরকে মারতে যায়, পারে না। হাত কেটে নিতে গেলে ঠাকুর গব্বরকে হাত দিয়ে দেন স্বেচ্ছায়! কী কাণ্ড, ঠাকুরের হাত পেয়ে গব্বর ডাকাতি ভুলে কবিতা লিখতে শুরু করে, ডুবে যায় পড়াশোনায়, গানে। ‘ঠাকুর’টি যে রবীন্দ্রনাথ! তাঁকে নিজের মতো করে, দেদার মজা আর খেপামিতে খুঁজে ফিরেছে ‘ব্ল্যাংক ভার্স’-এর নতুন নাটক চশমে বদ্দুর। রাজা ভট্টাচার্যের ভাবনা ও নির্দেশনায়, দেবশঙ্কর হালদারের সঙ্গে মঞ্চ মাতাবে পনেরো জন শিশু নাট্যকর্মী— ৯ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়, অ্যাকাডেমি মঞ্চে।

নাট্য বিষয়ক

থিয়েটার নিয়ে নানা রকম ভাবনা। নাটককে কত শিল্পসম্মত ভাবে দেখা যায়, তার প্রকাশ এ বারের স্যাস নাট্যপত্রে (সম্পা: সত্য ভাদুড়ী)। বাংলার ও ভারতীয় থিয়েটার, সোমেন্দ্রচন্দ্র নন্দী থেকে পিটার ব্রুক— নাটক ও নাট্যব্যক্তিত্ব বিষয়ক প্রবন্ধাদি ঋদ্ধ করেছে নাট্যপত্রটিকে। বাঙালি নাট্যকারের গদ্যভাবনা নিয়ে যেমন, তেমনই অভিনয় নাট্যপত্রিকা নিয়ে স্মৃতিগদ্য, দুই-ই নাট্যাসক্ত পাঠক ও দর্শককে আকৃষ্ট করবে। সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় মলয় রক্ষিত দীপক মিত্র নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায় কুন্তল মুখোপাধ্যায় শম্পা ভট্টাচার্য সাগরিকা শূর কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জয়তি বসুর ‘ছেঁড়া ছেঁড়া কথারা…’ থিয়েটারের ধুলোচাপা ইতিহাসের শিকড়সন্ধানে ব্রতী, পাশাপাশি হর ভট্টাচার্য সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় শেখর সমাদ্দার প্রমুখের লেখা নাটক। বাড়তি পাওনা— অশোক মুখোপাধ্যায়ের কলমে অনবদ্য গ্রন্থসমালোচনা।

নিরীক্ষার ছবি

করোনাকালে আয়োজিত আন্তর্জাল তথ্যচিত্র উৎসবে সাড়া পড়েছিল খুব, তারই প্রেরণায় এ বার ইমামি আর্ট-এর আয়োজনে সেখানেই শুরু হচ্ছে ‘এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। ৯ থেকে ১৩ নভেম্বর, দুপুর আড়াইটে থেকে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এক গুচ্ছ নিরীক্ষামূলক ছবির সম্ভার— অন্য রকম ভাবনা, নির্মিতির অভিনবত্বও বিশেষত্ব যাদের। সমসাময়িক শিল্প-পরিসরে কেন্দ্র ও প্রান্তকে মেলাতে চায় ইমামি আর্ট-এর ‘লোকাস ইন ফোকাস’ প্রকল্প, তারই অন্তর্ভুক্ত এই ছবি-উৎসব। কম্পিটিটিভ, স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং ও কিউরেটেড সেকশন, এই তিন বিভাগে েদখানো হবে চল্লিশের কাছাকাছি ছবি, বিশদ সূচি ইমামি আর্ট-এর ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে। রয়েছে পরিচালকদের কথা শোনার, কথা বলার সুযোগও।

ভারত-দর্শন


এশিয়ার সর্ববৃহৎ, বিশ্বের তৃতীয় সর্ববৃহৎ চিত্রকৃতিটি রয়েছে এই শহরে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে, ক’জন জানেন? কে-ই বা জানেন ‘প্রিন্স অব ওয়েলস-এর জয়পুরে প্রবেশ’ ছবিটির শিল্পীকে, ভাসিলি ভাসিলিয়েভিচ ভেরেশ্চাগিন (ছবি) যাঁর নাম! স্বনামধন্য এই রুশ শিল্পী উনিশ শতকে এসেছিলেন ভারতে, দু’বার— ১৮৭৪ ও ১৮৮২-তে। নিসর্গদৃশ্য ও প্রতিকৃতিচিত্র, এঁকেছেন দুই-ই। তাজ মহল দেখে তাকে এঁকেছিলেন যমুনার ও-পার থেকে, রুশ সরকার ১৯৯২-এ এক ডাকটিকিটে তুলে ধরেছিল তা (ছবিতে ডান দিকে)। দার্জিলিংয়ে আসেন ১৮৭৫-এ, যাত্রাপথে এঁকেছিলেন অজস্র খসড়াচিত্র: পর্বত অরণ্য জনপদ স্থাপত্য জনজীবনের, লিখে গিয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, দেখেছেন ভারতে ব্রিটিশের শাসন ও শোষণ। রুশ-ভারত সাংস্কৃতিক যোগের অন্যতম সূত্র এই শিল্পীর বাছাই কাজ নিয়ে প্রদর্শনী করছে কলকাতার রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র গোর্কি সদন, ৪ থেকে ১১ নভেম্বর (ছুটির দিন বাদে), দুপুর ৩টে থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত।

মেঘের শিল্প


একশো কুড়ি বছরের পুরনো বাড়ির মস্ত সিঁড়িটাই যদি হয়ে ওঠে শিল্পনিরীক্ষার স্থান ও পাত্র, একাধারে! অভিনব এই আর্ট ইনস্টলেশন হয়েছে পার্ক ম্যানসনে, গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট-ম্যাক্সমুলর ভবনের প্রধান সিঁড়িটিতে। জার্মানির কোলোন শহরের শিল্পী কাতিয়া দাভারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ, একটি ‘সাইট-স্পেসিফিক’ ইনস্টলেশন নির্মাণের, তারই শৈল্পিক প্রতিক্রিয়া ‘অন কেবলস অ্যান্ড কিউমিউলাস’ (ছবিতে), তিন তলা জুড়ে প্রসারিত শিল্পকৃতি— ড্রয়িং ও টেক্সটাইল-এর সমাহারে ঘনায়মান মেঘমালা। আন্তর্জাল-পরিভাষায় ‘ক্লাউড’ শব্দটি সুপরিচিত, তার দ্যোতনাটি কাব্যিক কিন্তু বাস্তববিশ্বে ফোনের লাইন, ফাইবার অপটিক্স ও কম্পিউটার মিলিয়ে জটিল ও বৃহৎ এক অস্তিত্ব তার। ‘মেঘ’-এর এই বিপ্রতীপ রূপক ছুঁয়েছেন শিল্পী। ১১ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় উদ্বোধন হবে শিল্পকৃতিটি, গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট কলকাতার ৬৫ বছর পূর্তির উদ্‌যাপন উপলক্ষে। আনন্দ-আবহে সঙ্গী ইগনাজ় শিক ও দেবজিৎ মহলানবিশের সঙ্গীতও।

চিত্রার্ঘ্য

শ্রীরামকৃষ্ণকে নানা সময়ে এঁকেছেন বাংলা ও বাংলার বাইরেও বহু চিত্রশিল্পী— নানা মাধ্যমে, নানা ভাবময়তায়। ভাবোন্মাদ সাধকের মন স্থিত থাকত যে দিব্য স্তরে, চিত্রময়তায় তার প্রকাশ সহজ নয় বড়। অজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রয়াস করেছেন, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের আর্ট গ্যালারিতে তাঁর চিত্রমালা প্রদর্শনী ‘ডিভাইন লাইফ অব শ্রীরামকৃষ্ণ’ শুরু হচ্ছে আগামী ৭ নভেম্বর সকাল ১১টায়, চলবে ১৯ তারিখ পর্যন্ত। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর-নন্দলাল বসুর শিল্পধারায় প্রভাবিত শিল্পীর তুলিকলা, ষাটের দশকের মাঝামাঝি ইন্দ্র দুগারের সঙ্গে যোগাযোগে পরিপুষ্ট যার অভিমুখ। পাঁচ দশকের চিত্রকৃতি নিয়ে তাঁর রেট্রোস্পেক্টিভ প্রদর্শনী হয়েছে ২০১৯-এই, বঙ্গ তথা ভারতের এক মহাজীবনের প্রতি চিত্রার্ঘ্য এ বার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের
Google News,
Twitter এবং
Instagram পেজ)

Source: https://news.google.com/__i/rss/rd/articles/CBMiggFodHRwczovL3d3dy5hbmFuZGFiYXphci5jb20vd2VzdC1iZW5nYWwva29sa2F0YS9rb2xrYXRhLWtvcmNoYS10aWxhay1wdXJha2F5YXN0aGFzLWJvb2stb24tdGhlLWhpc3Rvcnktb2YtY2l0eS1rb2xrYXRhL2NpZC8xMzgxOTUx0gGGAWh0dHBzOi8vd3d3LmFuYW5kYWJhemFyLmNvbS9hbXAvd2VzdC1iZW5nYWwva29sa2F0YS9rb2xrYXRhLWtvcmNoYS10aWxhay1wdXJha2F5YXN0aGFzLWJvb2stb24tdGhlLWhpc3Rvcnktb2YtY2l0eS1rb2xrYXRhL2NpZC8xMzgxOTUx?oc=5