কলকাতা কড়চা: ঐতিহ্যের পথ বেয়ে – Anandabazar Patrika

কলকাতা নিউজ

১০০ গড়পার রোডে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী যে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন, যে বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়, সে বাড়িতেই জন্ম সত্যজিতের। শৈশবও সেখানেই, অনেকটা সময় কাটত বাড়ির একাংশে ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’-এর ছাপাখানার ভিতরে। সেই ছাপাখানায় কী কাজ হয়, কেমন ভাবে, অন্য ছাপাখানার সঙ্গে তার পার্থক্য কোথায়, এ সব বোঝার বয়স তখন সত্যজিতের ছিল না। তাঁর যখন ছয় বছর বয়স, তখন ব্যবসা উঠে যাওয়ার পরে সত্যজিৎ চলে আসেন ভবানীপুরে, অন্য পরিবেশে। ‘ইউ রায়’-এর সঙ্গে যেটুকু সূত্র রয়ে গিয়েছিল তা হল উপেন্দ্রকিশোরের লেখা কয়েকখানি বই আর বাঁধানো কিছু সন্দেশ পত্রিকায় তাঁর আঁকা ও ছাপা কিছু ছবি।

পরবর্তী কালে সত্যজিৎ রায় যখন দিগ্বিজয়ী চলচ্চিত্রকার, ষাটের দশকের গোড়ায় নতুন উদ্যোগে ফের সন্দেশ প্রকাশ করা শুরু করছেন, তখন লিখেছিলেন, পুরনো ‘সন্দেশে’ প্রকাশিত উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ও ছবিগুলি আবার ভাল করে পড়া ও দেখার কথা। অনুভব করেছিলেন, “শিশুসাহিত্যের অনেকগুলো দিক উপেন্দ্রকিশোর যে ভাবে আয়ত্ত করেছিলেন তেমন আর কেউ করেনি।”

সন্দেশ পত্রিকার যাত্রা আজও অব্যাহত, শারদীয় ১৪২৯ সংখ্যাটিও সেজে উঠেছে সত্যজিতের আঁকা প্রচ্ছদে (মাঝের ছবিতে)। “১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সন্দেশ দ্বিমাসিক হয়ে ওঠে আর তার সাইজ়ও হয় বেশ বড় আকারের, সেই সময়ের করা বাবার একটি প্রচ্ছদ আবার ফিরিয়ে আনা হল। কয়েকটি লেখার শেষেও টেলপিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সন্দেশ-এরই বিভিন্ন সংখ্যা থেকে বাছাই-করা বাবার আঁকা কিছু ছবি। ওঁর আমলের সন্দেশ-এর চেহারাটা ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছি,” বললেন সম্পাদক সন্দীপ রায়। তাঁরই উদ্যোগে এ সংখ্যায় প্রকাশ পেয়েছে ‘বাবার খেরোর খাতার অন্য দিক’: “ছোটবেলায় বাবার কাজের ঘরে আমাকে ঢুকতে দেখলেই তিনি খেরোর খাতায় আমার জন্য নানা রকম ছবি আঁকতে শুরু করতেন। এ ছাড়াও চিত্রনাট্যের কাজের ছবির বিভিন্ন জনের স্কেচ আঁকতেন বাবা, বিভিন্ন মুহূর্তে, ভিন্ন ভিন্ন অবকাশে।” ছবির সম্পাদক দুলাল দত্তের স্কেচ এঁকেছেন, আবার জওহরলাল নেহরুরও। সঙ্গীতের স্বরলিপি নিয়ে সত্যজিতের অগ্রন্থিত একটি প্রবন্ধ রয়েছে, ‘সোনার কেল্লা অভিযান’ নিয়ে ঋদ্ধি গোস্বামীর লেখা, সব্যসাচী চক্রবর্তীর তোলা ছবি ও লেখা নিয়ে ‘জলে জঙ্গলে’, আরও বিশিষ্টজনের কলমে ঝলমলে।

সন্দেশ-এর কাজ সেরে সন্দীপবাবু পাড়ি জমিয়েছেন ফ্রান্সে, এক্স-অঁ-প্রোভঁস শহরে সাহিত্য ও সিনেমার এক উৎসবে। এ বছর চল্লিশ পূর্তি সে উৎসবের, ১৩-১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উৎসবের নামকরণের উৎস রবীন্দ্র-উপন্যাস থেকে প্রাণিত সত্যজিৎ-ছবি ঘরে-বাইরে। দর্শকদের সামনে সন্দীপ রায় উপস্থাপন করেছেন সত্যজিতের চারটি ছবি: পথের পাঁচালী, জলসাঘর, মহানগর, কাপুরুষ। সঙ্গে ছিল আলোচনা, সত্যজিতের প্রিয় আলোকচিত্রী অঁরি কার্তিয়ে-ব্রেসঁ’র ছবির প্রদর্শনীও। ছবিতে জন বুরম্যান বিলি ওয়াইল্ডার ও মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিয়োনির সঙ্গে সত্যজিৎ রায়, কান চলচ্চিত্রোৎসবে।

মননের মূর্তি


মার্ক্সীয় দর্শনের আপাত-জটিলতা ও পরিভাষার গোলকধাঁধাকে সরিয়ে তরুণ আগ্রহীদের কাছে সহজ করে তুলেছেন এই দর্শন। ‘জিজ্ঞাসা’ সিরিজ়ে তুলে এনেছেন বস্তুবাদ, মার্ক্সবাদ ও দ্বন্দ্বতত্ত্বের আলোচনা। দৃঢ়বাক রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের (ছবিতে) কথনে থাকত যুক্তির পারিপাট্য, বোধের দীপন। ২০০৯-এ প্রকাশিত স্টাডিজ় অন দ্য চার্বাক/লোকায়ত তাঁর খ্যাতিকে করেছে আন্তর্জাতিক। যুগবাহিত তর্কধারাকে সমকালের প্রেক্ষাপটে রেখে গড়েছিলেন স্বতন্ত্র ঘরানা, তার নির্যাস ব্রাহ্মণ-রোমান ক্যাথলিক বিসংবাদ, কামারের এক ঘা, বাংলা ভাষার ভূত-ভবিষ্যৎ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, মননের মূর্তি-সহ একাধিক গ্রন্থে। বিজ্ঞানের সনিষ্ঠ ইতিহাসকার মানুষটি প্রয়াত হলেন গত ২ অক্টোবর; বই-চিত্র সভাঘরে ১১ অক্টোবর তাঁকে নিয়ে বললেন শোভনলাল দত্তগুপ্ত রতন খাসনবিশ অভ্র ঘোষ আশীষ লাহিড়ী চিন্ময় গুহ প্রমুখ।

নদী বাঁচাতে

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, রাশিয়ার ভলগা, গঙ্গার উৎস থেকে পদ্মার মোহনা পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছেন সাইকেলে— নদী বাঁচানোর বার্তা নিয়ে। নিজে দেখেছেন নদীর ভাঙাগড়া, শস্যক্ষেত্রে পরিণত হওয়া। তাঁর যুক্তি, নদী বাঁচলে জল বাঁচবে— গত কয়েক বছর ধরে সেই সচেতনতারই পাঠ দিয়েছেন দেশে-বিদেশে, নিজের চাকরি ছেড়ে। বাঘাযতীনের বাসিন্দা সম্রাট মৌলিক সুপরিচিত ‘রিভার সাইক্লিস্ট’ হিসেবে। নদীর দূষণ রুখতে, জল বাঁচাতে বদ্ধপরিকর মানুষটি নিজের শহরে নদী ও জল বাঁচানো নিয়ে বললেন গত ১৬ অক্টোবর, ইকোসেভিয়ার ফাউন্ডেশন ও বাঘাযতীন রিক্রিয়েশন ক্লাবের উদ্যোগে— ‘নো টু প্লাস্টিক, ইয়েস টু ওয়াটার’। পরিবেশ রক্ষায় পৃথিবী জুড়ে অনেকেই লড়াই করছেন, ভবিষ্যতের বিশ্বে তীব্র জলসঙ্কটের অশনিসঙ্কেতের মুখে কলকাতার নাগরিকের এই প্রয়াস দৃষ্টান্তস্বরূপ।

ভাবানোর শিল্প

পরিবেশ নিয়ে ভাবছে এ শহরের সংস্কৃতি চর্চাকারী প্রতিষ্ঠানগুলিও। গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট-ম্যাক্সমুলার ভবনের সাম্প্রতিক উদ্যোগটি অভিনব: শহরের বাছাই কয়েকটি জায়গায় চোখের সামনে গড়ে ওঠা শিল্পরূপ তথা ‘মোবাইল পপ-আপ ইনস্টলেশন’-এ পরিবেশ রক্ষার বার্তা। রিসাইক্লিং, বায়ু দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে নাগরিকদের ভাবানোই উদ্দেশ্য; সে কাজটিই করেছেন সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায় অম্লান চৌধুরী অনুপ প্রামাণিক কল্লোল দত্ত প্রমুখ শিল্পী, এ ছাড়াও শিল্পগোষ্ঠী ও অসরকারি সংস্থারা মিলে। গত ১৯ তারিখ ‘রিসাইক্লিং অ্যান্ড রিপেয়ার’ ভাবনায় শিল্প-অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ২১ তারিখে জলাভূমি বিষয়ে আর একটি ইনস্টলেশন হল খেয়াদহ হাই স্কুলে।

শিল্পবই

বই এক জিনিস, শিল্পবই ভিন্ন এক ব্যাপার। বইয়ের বিষয়ভাবনা থেকে মুদ্রণের ব্যাকরণ-প্রকরণ ও পরিকাঠামোর ব্যবহার, সবই সেখানে একাধারে স্পর্ধা ও ঝুঁকির— সাধ ও সাধ্যকে মেলানোর, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর। একুশ শতকের কলকাতায়, আগাগোড়া লেটারপ্রেসে ছাপা বই তারকেশ্বরের তারকা অথবা এলোকেশী-মোহন্ত উপাখ্যান এমনই এক অভিনব প্রকাশ। উনিশ শতকের বহুচর্চিত ‘কেচ্ছা’ এখানে বাংলা গ্রাফিক-নভেল রূপে, সৌম্যদীপ রায়ের পদ্যভাষায়। সঙ্গী সেকালের পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন-টুকরো। টেক্সটকে সঙ্গত করেছে জয়িতা চট্টোপাধ্যায়ের কাঠখোদাই ছবি। মুদ্রিত হাজরার জয়কালী প্রেসে, সার্বিক শিল্পভাবনা ও গ্রন্থনির্মাণ অরণ্য সেনগুপ্তের। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ফর দি আর্টস-এর একটি প্রকল্পের অধীনে এ বই ছাপা হয়েছে মাত্র ১০০ কপি!

ফিরে দেখা

“চিত্রভাষার ব্যাপারে বিপ্লবের পুরোধা হলেন জঁ-লুক গোদার,” মন্তব্য করেছিলেন সত্যজিৎ রায়, সেই ষাটের দশকের শেষে— সে দশক গোদারের চলচ্চিত্রকার হিসেবে আবির্ভাবের কাল, এবং তাঁর প্রভাবে আন্তর্জাতিক ফিল্মের দুনিয়া তোলপাড়। প্রয়াণের পরে তিনি আবার বাঙালির আলোচনায়। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই)-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস-এর আয়োজন ‘ব্যাক টু গোদার’, ২৭ ও ২৮ অক্টোবর দু’দিনে বিকেল ৫টা ও সন্ধে ৬.৪৫-এ এসআরএফটিআই প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে তাঁর চারটি ছবি, পাশাপাশি গোদারের শিল্পকৃতি নিয়ে বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় গৌতম ঘোষ ও মানস ঘোষ।

অবাক জলযান


প্রাতিষ্ঠানিক বন্দরের আবির্ভাবের ঢের আগেই জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র হিসেবে তৎকালীন বম্বে ও স্কটল্যান্ডের ডাম্বারটন শিপইয়ার্ডের সঙ্গেও পাল্লা দিয়ে সমুদ্রোপযোগী ছোট-বড় জাহাজ নির্মাণে পারদর্শিতা দেখিয়েছিল কলকাতা। আজ যেখানে খিদিরপুর ডক, উনিশ শতকের গোড়ায় সেখানে ছিল জেমস কিড ও তাঁর ভাইয়ের জাহাজ নির্মাণ কারখানা, পরে ক্যালকাটা ডকিং কোম্পানি সে ব্যবসা কিনে নেয়। এখান থেকে ও হাওড়া-পারের নানা ডকইয়ার্ড থেকে ভেসেছিল অনেক জাহাজ, দু’দিকে হাঁসের মতো পাখাওয়ালা প্যাডেল স্টিমারও। সম্প্রতি ১৯৪৫-এ ডাম্বারটনে নির্মিত ‘পি এস ভূপাল’ (নীচের ছবিতে) নামের একটি প্যাডেল স্টিমারকে জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা ‘ইস্টার্ন নেভিগেশন কোম্পানি’-র সহায়তায় ‘বেঙ্গল প্যাডেল’ নামে নবরূপে সামনে এনে জলপর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করল কলকাতা তথা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর। তিন তলা, ২০৫ ফুট দীর্ঘ জাহাজটিতে রয়েছে নানা আকর্ষণ, একটি মিউজ়িয়মও। গত ১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন বন্দরের অধ্যক্ষ বিনীত কুমার, বন্দর-ঐতিহ্য নিয়ে বললেন গৌতম চক্রবর্তী। আশ্চর্য জলযানে ইতিহাসের স্বাদ নেওয়ার অপেক্ষা এখন।

হাতের পুতুল


নরম মাটি হাতের চাপে গড়ন পায় পুতুল বা পাত্রের। কোনও যুদ্ধ নেই, দখল কায়েমের রক্তপাত নেই, শুধু অবধারিত স্পর্শেরা চোখ জুড়োনো মন ভোলানো পুতুল রূপে সামনে। হাতে গড়া সেই সব পুতুল ও পাত্র উচ্চ তাপে কাচ-রঙের প্রলেপে পুড়িয়ে হয়ে ওঠে আশ্চর্য সেরামিক্স শিল্পকৃতি। তাদের নিয়েই প্রদর্শনী চলছে স্টুডিয়ো ক্যালিক্স-এ, ১৫ অক্টোবর থেকে। শিল্পী তমাল ভট্টাচার্যের এই স্টুডিয়োতে এক সঙ্গে কাজ করেছেন চিত্রালী (সঙ্গের ছবিতে তাঁর কাজ) ধনঞ্জয় মেখলা মৃন্ময়ী নব্যেন্দু রানী সুস্মিতা উদয়, তমাল নিজেও। কেউ হাতে গড়েছেন, কেউ হাত পাকিয়েছেন। পুতুলেরা সেজে উঠেছে নিজেদেরই আঁতুড়ঘরে আর বারান্দায়, তাদের ঘিরে চলছে গান ও কথা, যেমনটা হয় বাংলার ঘরে ঘরে, ব্রত পালা পার্বণে। গড়িয়া থেকে বারুইপুরের দিকে, বেনের চাঁদনি বাস স্টপের কাছেই এই প্রদর্শনীস্থল, ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত, দুপুর ১টা থেকে সন্ধে ৭টা।

স্মৃতিদিন

তাঁর গল্পের চরিত্র শচীর মনে হয়েছিল ট্রামলাইন যেন এক ‘বিরাট হাঙর’। নিজে লিখেছিলেন, “ট্রামের লাইনের পথ ধরে হাঁটি: এখন গভীর রাত/ কবেকার কোন্ সে জীবন যেন টিটকারি দিয়ে যায়…” রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ১৯৫৪-র অক্টোবরের আকাশে কোন অনিবার্য ইঙ্গিত ছিল, যা পেয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশ! ট্রামের ক্যাচারে ঢুকে যাওয়া শরীর, ঠাঁই হল শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে, প্রয়াত ২২ অক্টোবর। শবানুগমনে কাঁধ দিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়; “আমার ধারণা তিনি আত্মহত্যা করেছেন,” সঞ্জয় ভট্টাচার্য লিখেছিলেন পরে। ২২ অক্টোবর ফিরে ফিরে আসে এ শহরে, স্রেফ মৃত্যু নয়, ‘নির্জনতম কবি’র জীবন ও যাপনও মনে করিয়ে দেয়। গত ১৮ অক্টোবর সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিল বিসর্গ পত্রিকার আয়োজনে এক অনুষ্ঠান, গাঙ্গুলিপুকুর স্বপ্না সভাগৃহে, অদূরেই যার জীবনানন্দ সেতু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের
Google News,
Twitter এবং
Instagram পেজ)

Source: https://news.google.com/__i/rss/rd/articles/CBMiiAFodHRwczovL3d3dy5hbmFuZGFiYXphci5jb20vd2VzdC1iZW5nYWwva29sa2F0YS9rb2xrYXRhLWtvcmNoYS00MC15ZWFycy1vZi1jaW5lbWEtYW5kLWxpdGVyYXR1cmUtZmVzdGl2YWwtaW4tYWl4LWVuLXByb3ZlbmNlL2NpZC8xMzc4NjIy0gGMAWh0dHBzOi8vd3d3LmFuYW5kYWJhemFyLmNvbS9hbXAvd2VzdC1iZW5nYWwva29sa2F0YS9rb2xrYXRhLWtvcmNoYS00MC15ZWFycy1vZi1jaW5lbWEtYW5kLWxpdGVyYXR1cmUtZmVzdGl2YWwtaW4tYWl4LWVuLXByb3ZlbmNlL2NpZC8xMzc4NjIy?oc=5