কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হবে অফলাইনেই – DW (বাংলা)

কলকাতা নিউজ

কোভিড অতিমারির জেরে শিক্ষা ব্যবস্থা জোর ধাক্কা খেয়েছে৷ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়ালেখা হয়েছে অনলাইনে৷ কিন্তু এখন কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে৷ কর্তৃপক্ষ চাইছেন, পরীক্ষা নেওয়া হোক আগের মতো বিভিন্ন কেন্দ্রে৷ কিন্তু পরীক্ষার্থীদের একাংশ চায় অনলাইনে পরীক্ষা দিতে৷ এখানেই বিরোধ তৈরি হয়েছে৷

এই বিরোধের পর্বে নজর ছিল শুক্রবার, ৩ জুনের বৈঠকের দিকে৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট পরীক্ষার পদ্ধতির ঠিক করতে এদিন বৈঠকে বসে৷ তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পরীক্ষা নেয়া হবে অফলাইনে৷ অর্থাৎ পরীক্ষা কেন্দ্রে বসে লিখতে হবে৷ আন্দোলনকারীদের দাবি নাকচ হওয়ায় ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীদের একাংশ৷ সিন্ডিকেট বৈঠকের একদিন আগে বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের বাইরে অনশনে বসেন পরীক্ষার্থীরা৷ তাদের প্রশ্ন, পড়ালেখা অনলাইনে হলে পরীক্ষা কেন হবে অফলাইনে? সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত, সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি থাকলে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে৷ কিন্তু পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া হবে না৷

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক শেষে বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটে সর্বসম্মতভাবে অফলাইন পরীক্ষার প্রস্তাব পাস হয়েছে৷ স্নাতক স্তরের বোর্ড অফ স্টাডিজ, স্নাতকোত্তর স্তরের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল ও কলেজ অধ্যক্ষরা অফলাইন পরীক্ষার বিষয়ে যে মতামত দিয়েছিলেন, তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ পরীক্ষার্থীরা হোম সেন্টারে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না৷ তাদের অন্য কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে৷ সিন্ডিকেটের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যে কলেজগুলিতে সিলেবাসের নির্দিষ্ট পঠনপাঠন শেষ করা যায়নি, সেখানে ক্লাস নিয়ে তা দ্রুত শেষ করে ফেলতে হবে৷ ক্লাস শেষের পর কলেজের সেমেস্টার কবে শুরু হবে, তা এখনো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করেনি৷ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি মাসের ২১ তারিখে কলেজ অ্যাডমিট কার্ড পাবে অনলাইনে৷ অর্থাৎ তার আগে পরীক্ষা নেওয়া হবে না৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তে অবশ্য পরীক্ষার্থী মহল দ্বিধাবিভক্ত৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ইউনিটি অফলাইনে পরীক্ষার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে৷ তবে পড়ুয়াদের বড় অংশের প্রশ্ন, এতো কম সময়ের মধ্যে কীভাবে ক্লাস শেষ করে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব? কলেজ স্ট্রিট চত্বরে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনে সামিল অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘জুন বা জুলাইয়ে পরীক্ষা নিলে এতো ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে৷ স্নাতকের ফলের ভিত্তিতে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ মেলে৷ চাকরির ক্ষেত্রেও এই ফল গুরুত্বপূর্ণ৷ এই এক মাসের মধ্যে তড়িঘড়ি ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক নয়৷”

রাজ্যের অন্য দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আগেই অফলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ অন্যদিকে বর্ধমান ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত, পরীক্ষা নেয়া হবে অনলাইনে৷ অর্থাৎ একই বছরে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করবে৷

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মূল্যায়ন একেবারেই ঠিকঠাক হবে না৷ অনলাইনে পরীক্ষা নিলে যাদের মেধা কম, তারাও নানা উপায়ে মেধাসম্পন্ন পড়ুয়াদের কাছাকাছি ফল করতে পারে৷ অনলাইনে শিক্ষাদান হতে পারে, পরীক্ষা নেয়া একেবারেই অযৌক্তিক৷”

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত সংস্থা৷ তারা স্বাধীনভাবে কাজকর্ম চালায়৷ তাই শিক্ষা দফতর কর্তৃপক্ষের হাতে পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দিয়েছিল৷ সে কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে৷ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদরা৷

ড. সরকারের মন্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের শুভবুদ্ধি হলে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নেয়া উচিত৷ তারা বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে থাকে৷ আচার্য কে হবেন, তা নিয়ে বিতর্ক হয়৷ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ দেখা যায়৷ পরীক্ষা নিয়ে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল৷”

Source: https://www.dw.com/bn/%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%AB%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87/a-62032539