আগেই আছে এক নারিন, আরেক নারিনকে নিলো কলকাতা – জাগো নিউজ

কলকাতা নিউজ

মেগা নিলামের আগেই ক্যারিবীয় স্পিনিং অলরাউন্ডার সুনিল নারিনকে নিজেদের দলে রেখে দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। পরে নিলামের টেবিল থেকেও আরেক নারিনকে দলে ভিড়িয়েছ আইপিএলের দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। এই নারিন অবশ্য জালালাবাদের নারিন।

রোববার নিলামের দ্বিতীয় দিন শেষ দিকে গিয়ে ডাকা হয় ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার রমেশ কুমারের নাম। ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ রুপিতেই তাকে দলে নিয়ে নেয় কলকাতা। স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে প্রশ্ন জাগার কথা, এই রমেশ কুমার কে?

নিলামে ব্যাটার হিসেবে নাম দিলেও মূলত পাঞ্জাবের জালালাবাদের এ তরুণের বোলিংটাই শক্তির জায়গা। রমেশের মতে তার বাঁহাতি স্পিন বোলিংয়ের অ্যাকশন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্যারিবীয় তারকা সুনিল নারিনের মতো। যে কারণে তাকে জালালাবাদের নারিন নামেই ডাকা হয়।

শুধু তাই নয়, নিজের ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলের নামও রমেশ কুমার নারিন লিখে রেখেছেন এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার। তিনি মূলত টেনিস বল ক্রিকেট থেকে উঠে এসেছেন। ইউটিউবে নারিন জালালাবাদ লিখে খুঁজলেই পাওয়া রমেশ কুমারের ১০ বলে ফিফটি হাঁকানোর ভিডিও।

টেনিস বল ক্রিকেটে সেই ১০ বলে ফিফটির মাধ্যমেই মূলত আলোড়ন তুলেছিলেন রমেশ। আরেকটি ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায়, প্রিয় ক্রিকেটারের নাম জিজ্ঞেস করা হলে স্থানীয় এক টেনিস বল ক্রিকেটারের নাম বলছেন রমেশ। এতেই বোঝা যায়, পেশাদার ক্রিকেট থেকে কতটা দূরে ছিলেন তিনি।

এবারের নিলামে কলকাতা দলে সুযোগ পেলেও, এর পুরো অবদান টেনিস বলের টুর্নামেন্টগুলোকেই দিচ্ছেন রমেশ। নয়তো কেউ চিনতোই না বলে মনে করেন তিনি। টেনিস বল ক্রিকেটে সুপারস্টার হওয়ার পর এবার ক্রিকেট বলে ভালো করার চ্যালেঞ্জ রমেশের সামনে।

বন্ধুদের পরামর্শেই মূলত ক্রিকেট বলেও খেলা শুরু করেছিলেন রমেশ। তেমন কোনো কোচিং না পেলেও, টেনিস বলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই মোগার হয়ে ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট খেলেন তিনি। সেই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে নিজের জাত চেনান তিনি।

ডিস্ট্রিক্ট পর্যায়ে ভালো করার পর গত বছর পাঞ্জাবের প্রাদেশিক ক্যাম্পে ডাক পেয়ে যান রমেশ। সেখানে তার দেখা হয় ভারতের হয়ে ২০১৬ সালে তিন ওয়ানডে খেলা পাঞ্জাব অলরাউন্ডার গুরকিরাত সিং মানের সঙ্গে। তখন তিনি মানকে নিজের আর্থিক অবস্থার কথা জানিয়ে ভালো কোনো টুর্নামেন্টের খোঁজ দিতে বলেন।

মান তাকে প্রতিশ্রুতি দেন যেভাবেই হোক সাহায্য করবেন। তবে দিন শেষে রমেশের পারফরম্যান্সই কথা বলেছে। মানের হাত ধরে জেপি আত্রাই ট্রফিতে মিনারভা ক্রিকেট অ্যাকাডেমির হয়ে খেলার সুযোগ পান রমেশ। যেখানে প্রথম ম্যাচে ৩৫ রানে ৫ ও পরের ম্যাচে ৩২ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি।

পরে রমেশের এসব ম্যাচের ভিডিও কলকাতার সহকারী কোচ অভিষেক নায়ারের কাছে পাঠিয়ে দেন মান। যা দেখে অল্প দিনের মধ্যেই নাইট রাইডার্স থেকে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য ফোন পান রমেশ। সেখানে গিয়ে বোলিং-ফিল্ডিং করেন তিনি। পরে নিলামে তাকে দলে নিয়ে নেয় কলকাতা।

ব্যক্তিজীবনে খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছে রমেশ। তার বাবা একজন মুচি এবং মা আশপাশের গ্রামে সাজের প্রসাধনী বিক্রি করেন। ছোট শহরের অন্যান্য ছেলেদের মতোই টেনিস বল দিয়েই ক্রিকেটে হাতেখড়ি রমেশের।

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্থানীয়রা রমেশের ব্যাটিং-বোলিংয়ের প্রতিভা বুঝতে পারেন এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্টের জন্য আমন্ত্রণ করতে থাকেন। তবে রমেশের জন্য বিষয়টা সহজ ছিল না। কেননা পরিবার সবসময়ই চাইতো ভালো একটি চাকরি করুক রমেশ।

তবু নিজের স্বপ্ন থেকে সরে দাঁড়াননি তিনি। প্রায় সময়ই বাড়িতে মিথ্যা বলে ক্রিকেট খেলতে যেতে হতো তাকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই টেনিস বলের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট জিতে পাওয়া অর্থ পুরস্কার দিয়েই নিজের পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন রমেশ।

এসএএস/জেআইএম

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখতে পারেন জাগো নিউজে। আজই পাঠিয়ে দিন – [email protected]

Source: https://www.jagonews24.com/sports/cricket/739301