নানা রূপে মাতৃ আরাধনায় ব্যস্ত কলকাতা – বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা নিউজ

কলকাত: অবাঙালি ভারতীয়দের মধ্যে প্রবাদ বাক্য রয়েছে, ‘জয় কালী, কলকাত্তাইয়া বালী’। অর্থাৎ কলকাতাবাসী মানেই সরাসরি কালীমায়ের ভক্ত।

বাস্তবিক অর্থে পশ্চিমবঙ্গবাসীরা মাতৃসাধনা অর্থাৎ মা কালীর উপাসনা বেশি করে থাকেন। সে কারণেই পশ্চিমবাংলায় কালীঘাট, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বরসহ একাধিক কালী মাতৃমন্দির রয়েছে। মুলত কালীপূজা মধ্যরাতেই হয়ে থাকে।

তবে কলকাতায় দুর্গাপূজার থেকে বারোয়ারি মণ্ডপগুলোয় কালীপূজা বেশি হয়ে থাকে। সেখানে কালী প্রতিমার নানা রূপের বেশি পূজা হয়ে থাকে দক্ষিণ কলকাতার চেতলায়। রাস্তার দু’পাশে প্রায় প্রতি ৫০ মিটার অন্তর একটি করে কালীপূজা হয়। প্রত্যেকটি পূজা নিজ নিজ ঐতিহ্যে বিখ্যাত। মোটের উপর দুই বর্গ কিলোমিটারের মধ্যেই কালী মায়ের সব রূপের সাক্ষী থাকতে পারেন দর্শকরা। কোথাও ছিন্নমস্তা, চামুণ্ডা, রক্তচামুণ্ডা, কোথাও আবার হাজারহাত, শ্যামাকালী। কোথাও আবার মায়ের দশরূপ এক মণ্ডপে পূজিত হয়। সব মিলিয়ে চেতলাই যেন মায়ের ভিন্ন ভিন্ন রূপের সমাহার ক্ষেত্র।

চেতলার পূজাগুলো
চেতলা এলাকার সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যশালী কালীপূজা ২৪ পল্লীর পূজা। এবারে ১০৭তম বর্ষে পদার্পণ করেছে পূজাটি। একইমঞ্চে ১২ রকমের প্রতিমা পূজা হয়ে থাকে। চিরাচরিত রূপ তো থাকেই, পাশাপাশি শ্মশানকালীর মূর্তিকে মধ্যমণি করে দশমহাবিদ্যার পূজাও হয় এ ২৪ পল্লীতে।

অন্যদিকে রয়েছে চেতলা এলাকার আরও একটি প্রাচীন পূজা। ৭৪তম বর্ষে পদার্পণ করলো আলিপুর আরাধনা সমিতি। তারা চামুণ্ডা রূপে পূজা করেন। এবারেও ঐতিহ্য বজায় রেখে পূজা করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। এরপরেই চেতলা হাট রোডে সবচেয়ে বেশি পূজার সমাহার। বলা চলে কালীপূজার মেলা।

রাস্তার দু’পাশে একাধিক পূজা হয় সেখানে। এক পূজা মণ্ডপের আলোকসজ্জা শেষ হতে না হতেই অন্যটির আলো শুরু। ওই এলাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পূজাগুলোর মধ্যে অন্যতম ৮৬ পল্লী ক্লাব। সেখানে কালী প্রতিমা ছিন্নমস্তা রূপে পূজা হয়। গত ২৫ বছর ধরে এখানে ছিন্নমস্তাকেই দেবীরূপে পূজা করা হয়। তন্ত্রশিক্ষায় পারদর্শী পুরোহিত শক্তির আরাধনা করেন। এ পূজার উপাসনায় এখনও পাঠাবলি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।

এ পূজা মণ্ডপের বাহির পথেই রয়েছে হাজার হাতের কালীপূজা। হাজারটি হাত নিয়ে সেখানে দেবীর শান্ত রূপ। পদ্মের উপরে আসীন রয়েছেন শ্যামা কালী। দেবীর গায়ে বেনারসি শাড়ি। ৬২তম বর্ষে বারোয়ারি এ পূজায় কোনো থিমের চমক নেই। তবে ঐতিহ্যের জন্যই এ পূজা বিখ্যাত। এরপরেই রয়েছে প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার রক্তচামুণ্ডার প্রতিমা। কালীঘাট মিলন সঙ্ঘের মণ্ডপের বেদিতেই এ মূর্তি তৈরি হয়ে থাকে।

অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতার অন্যান্য জায়গাতেও পূজার আমেজ জমে গেছে। কালীঘাট মহাশ্মশানে, শ্মশানকালী পূজাতেও চেনা রীতি মেনেই পূজা হয়ে থাকে। এছাড়া অঞ্চলে সাবেকিয়ানা ঘরানায় একাধিক শ্যামাকালীর পূজা হয়ে থাকে।

পাশাপাশি চেতলা সংলগ্ন বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) কালীঘাটে নিজের বাসভবনে পূজা করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারাদিন উপোস থেকে এ পূজা বছরের পর বছর করে থাকেন মমতা। তবে এ পূজায় নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া সাধারণের প্রবেশের অনুমতি থাকে না। ফলে কালীপূজা আর দীপাবলির আলোর উৎসবে ভারতসহ মেতে রয়েছে গোটা কলকাতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২১
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Source: https://www.banglanews24.com/india/news/bd/890325.details