উত্তরাখণ্ড বিপর্যয়। ফাইল ছবি।
ভারতের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বিপদসীমার বাইরে নয় কলকাতা। বিজ্ঞানীদের দাবি, আচিরেই উত্তরাখণ্ডের মতো বিপর্যয় ঘটতে পারে শহর কলকাতাতেও।
#নয়াদিল্লি: উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় হড়পা বান কেন দেখা দিল, সেই নিয়ে এখনও বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ, গবেষণা চলছে। অনুমান করা হচ্ছে যে হিমানী সম্প্রপাত বা হিমবাহ হ্রদের হঠাৎ ফেটে যাওয়া, যাকে ইংরেজিতে গ্লেসিয়াল লেক আউট বার্স্ট ফ্লাড (GLOF) বলে, সেই কারণে এই বিপর্যয় ঘটেছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে এখনও পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ এখনও নিরুদ্দেশ।
পুণের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিকাল মেটিরিওলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী ডক্টর রক্সি মেথিউ কোল বলেছেন, এই ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে জলবায়ুর পরিবর্তন। এছাড়াও উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় যে নতুন তুষারপাত হয়েছে, সেই বরফ জলের উপরে জমে যাওয়ায় ফ্ল্যাশ ফ্লাড হওয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডক্টর কোল। ভারতের জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে যে সাম্প্রতিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেখানে একটি ভয়াবহ তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতি দশকে জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য হিমালয়ের তাপমাত্রা .২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৪০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় এই উষ্ণায়নের পরিমাণ দশক প্রতি .৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ভাবে উষ্ণ হয়ে যাওয়ার জন্য বিগত কয়েক দশকে হিমালয়ের বরফ গলতে শুরু করেছে এবং যে বিপুল পরিমাণ বরফ এত দিন জমা হয়েছিল সেটার পরিমাণও কম হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ডক্টর কোল।
কেন করা হচ্ছে বিপর্যয় ম্যাপিং?
টেরি (TERI)-র সেন্টার ফর হিমালয়ান ইকোলজির তরফ থেকে হিমবাহবিদ শ্রেষ্ঠ তয়াল বলেছেন যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করা যাবে না ঠিকই, কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি এই বিপর্যয়প্রবণ এলাকা আগে থেকে চিহ্নিত করে নেওয়া যায়, তাহলে সম্পদ ও মানুষের প্রাণহানি অনেক কম হবে।
বিপর্যয় ম্যাপিং কীভাবে হচ্ছে?
যে সমস্ত হিমবাহ হ্রদ খুব দ্রুত আয়তন বিস্তার করছে বা ক্রমাগত বৃষ্টি হয়ে চলেছে যে সব হ্রদ অঞ্চলে, সেগুলিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে খুঁজে বের করা হচ্ছে। কারণ এই জাতীয় অঞ্চলেই বিপর্যয়ের আশঙ্কা বেশি থাকে।
তৈরি হচ্ছে নতুন কাজের সুযোগ:
হিমবাহ নিয়ে গবেষণা করার জন্য অনেক বেশি অর্থ এখন বরাদ্দ করা হচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে অনেক নতুন কাজের সুযোগ। গ্লেসিওলজি বা হিমবাহ বিজ্ঞানের মতো বিষয় এখন শুধু কেরিয়ার তৈরিতে নয়, ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করছে গবেষণামূলক কাজকর্ম করার জন্য।
কীভাবে দেওয়া হচ্ছে বিপর্যয়ের সতর্কতা?
ওয়াদিয়া ইন্সটিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির গ্লেসিওলজি ও হাইড্রলজি বিভাগের সিনিয়ার বিজ্ঞানী ডক্টর সন্তোষ কুমার রাই বলেছেন সতর্কতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতকে খুব তৎপর থাকতে হবে এবং অত্যন্ত দ্রুত এই কাজ করতে হবে। এই ওয়ার্নিং সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাই। কারণ এতে আপৎকালীন সময়ে আরও দ্রুত বিপর্যয়ের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ভারতের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বিপদসীমার বাইরে নয় কলকাতা। বিজ্ঞানীদের দাবি, আচিরেই উত্তরাখণ্ডের মতো বিপর্যয় ঘটতে পারে শহর কলকাতাতেও। তবে হিমবাহ বিস্ফোরণ নয়, কলকাতা পড়তে পারে মেঘভাঙা বৃষ্টির কবলে। আর তা হলে রক্ষে নেই। গোটা শহরটাই চলে যাবে জলের তলায়। কলকাতার বিপদ যে ক্রমশ বাড়ছে তা বেশ কয়েক বছর ধরেই একপ্রকার স্পষ্ট। প্রথম সতর্কতা দিয়েছিল ২০০৯ সালের আয়লা। তারপর মাঝের কয়েকটা ছোটখাটো সতর্কতা। শেষ বড় সতর্কতা ছিল আমফান। কার্যত গোটা শহর তছনছ করে দিয়েছিল শহর। একাধিক এলাকা চলে গিয়েছিল জলের তলায়। পরিবেশবিদদের দাবি, আসলে শহরের বিপদ বাড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগরের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি। যার জেরে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণীঝড় জন্ম নিচ্ছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। তাতেই বাড়ছে বিপদ।
পুরো খবর পড়ুন
Source: https://bengali.news18.com/news/national/glaciologists-suggest-different-ways-to-address-uttarakhand-like-natural-tragedies-tc-sdg-558173.html