বিজেপি বিক্ষোভ: কলকাতার মিছিলে পুলিশের লাঠি, গ্যাস, জল-কামান – BBC News বাংলা

কলকাতা নিউজ
  • অমিতাভ ভট্টশালী
  • বিবিসি বাংলা, কলকাতা

বেকার যুবকদের কাজের দাবি, রাজ্য পরিচালনায় ব্যাপক দুর্নীতি, বিজেপি কর্মীদের আক্রমণ-হত্যা এবং রাজ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সহ কয়েক দফা দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ সচিবালয় ‘নবান্ন’ ভবন অভিযানের ডাক খাতায় কলমে দিয়েছিল বিজেপি-র যুব শাখা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা।

কিন্তু বিজেপির রাজ্য স্তরের নেতারা তো বটেই, এমন কি কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও হাজির ছিলেন মিছিলে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে আজ বৃহপতিবারের মিছিলটিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।

চারটি মিছিল নিয়ে হাজার হাজার বিজেপি নেতা কর্মী গঙ্গার পশ্চিমদিকে হাওড়া শহরে রাজ্য সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে লাঠি, জল-কামান আর কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী হাওড়া শহরে ব্যাপক গণ্ডগোল হয়েছে।

শীর্ষ নেতাদের সামনে রেখে হাওড়া শহর থেকে দুটি এবং কলকাতা থেকে দুটি মিছিল এগোতে গেলে পুলিশ সব জায়গাতেই আটকিয়ে দেয়। বারে বারে ঘোষণা করা হতে থাকে যে মিছিলের অনুমতি নেই। তাই বিজেপি কর্মীরা যেন ব্যারিকেড ভেঙ্গে এগোনোর চেষ্টা না করেন।

মিছিলকারীরা অবশ্য সেই নির্দেশে কান না দিয়েই ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা করতে থাকেন। তখনই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশ প্রথমে লাঠি চালায়, তারপরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। সবশেষে বেগুনি রঙ গোলা জল স্প্রে করা শুরু হয় জল-কামান থেকে।

বিজেপি কর্মীরা ভাঙচুরও চালান, ব্যাপক ইঁট বৃষ্টি হয়।

বিজেপি নেতাকর্মীদের আটকাতে তিন স্তরে ব্যারিকেড করেছিল পুলিশ।

মিছিলের ওপরে বোমা ছোঁড়া হয়েছে অন্তত এক জায়গায় – যেটা স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলি দেখিয়েছে। বিজেপি দাবি করছে তাদের দুজন নেতা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আর অন্তত হাজার খানেক কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন।

মিছিলের অনুমতি ছিল না

রাজ্যের মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, মিছিলের অনুমতি না থাকার কথা তারা যুব মোর্চার আবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।

“কিছু প্ররোচনা ছিল। হিংসাত্মক ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে, আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের ওপরে আক্রমণ হয়েছে, যাতে বেশ কিছু পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। তবুও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত হাওড়া আর কলকাতায় মোট ৯৯ জনকে আটক করা হয়েছে,” জানিয়েছেন মুখ্য সচিব।

তিনি এও বলেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিসর রক্ষার প্রয়াসে রাজ্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু অপ্রীতিকর ঘটনাগুলি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করা হয়েছে।”

‘নবান্ন’ ভবন জীবাণুমুক্ত করতে বন্ধ ছিল

ঘটনাচক্রে গতকাল হঠাৎ করেই নবান্ন ভবন দুদিনের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার।

করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণত শনি ও রবিবার নবান্ন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। কিন্তু বিজেপির মিছিলের দিনই সচিবালয় বন্ধ করা হল কেন, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলছেন বিজেপি নেতারা, তেমনই তাদের অভিযোগ প্ররোচনা ছাড়াই মিছিলের ওপরে লাঠি – গ্যাস চালানো হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন:

নবান্ন জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। ফাইল চিত্র

তৃণমূল কংগ্রেস বলছে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এত বড় জমায়েত করে বিজেপি তো নিজেরাই তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অমান্য করল।

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রাহুল চক্রবর্তীর কথায়, “যে রাজনৈতিক দলটি আজ আন্দোলন করল, তাদেরই দল তো কেন্দ্রে ক্ষমতায়। কেন্দ্র সরকারই তো নির্দেশ দিয়েছে যে করোনা মহামারির কারণে সর্বোচ্চ একশো জনকে নিয়ে রাজনৈতিক জমায়েত করা যেতে পারে। আসলে বিজেপির কাছে করোনা গৌণ। এখানে মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনীতি।”

“আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য মানুষ মরুক কি বাঁচুক, তা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। সবক্ষেত্রেই রাজনীতি করতে হবে তাদের। আর এই মিছিলের জন্য যে বিজেপির কর্মীরা এলেন, তাদের করোনা হলে কে দায়িত্ব নেবে?” প্রশ্ন মি. চক্রবর্তীর।

যদিও আজকের মিছিলের মূল দাবি ছিল বেকারদের কাজ, দুর্নীতি এবং রাজ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, তবে আসলে বিজেপি যে আগামী বছরের ভোটের দিকে তাকিয়েই এই কর্মসূচি নিয়েছে, সেটা মিছিলের শেষে স্পষ্ট করে দিলেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সুরিয়া।

বৃহস্পতিবার বিজেপির প্রতিবাদ বিক্ষোভকে বাধা দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ

‘বিধানসভা ভোটের আগে আরও আগ্রাসী হবে বিজেপি’

মি. সুরিয়া বলছিলেন, “এটা তো শুরু। আমরা তখনই থামব, যখন ভারতীয় জনতা পার্টি রাজ্যের ক্ষমতায় আসবে। বাংলার হৃত গৌরব আমরা পুনঃস্থাপন করব এবং সকলে একসঙ্গে মিলে স্বৈরাচারী ও সবথেকে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এই সরকারকে রাজ্য থেকে তুলে ছুঁড়ে ফেলে দেব।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে বিজেপি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এখন থেকে আরও আগ্রাসী কর্মসূচি নিতে থাকবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুন্ধতী মুখার্জী বলছিলেন, “আজ যেভাবে বিজেপি কর্মসূচি নিয়েছিল, এরকমই বা এর থেকেও আগ্রাসী কর্মসূচি হয়তো আমরা ভোটের আগে আরও দেখতে পাব। আসলে পশ্চিমবঙ্গে একটা সরকার তো বেশ কিছু বছর ক্ষমতায় আছে, মানুষের মনে কিছু ক্ষোভ জন্মানো স্বাভাবিক। আর বিজেপি সেই ক্ষোভগুলোকেই কাজে লাগাতে চাইছে।”

একদিকে যেমন আগ্রাসী কর্মসূচি আরও বাড়াবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক হানাহানি বাড়ারও আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচনের প্রায় আট মাস বাকি থাকতেই বিগত তিন মাসে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মোট অন্তত ১২ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ৭ জনই বিজেপির। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস মনে করে যে এই সবগুলো রাজনৈতিক হত্যা যেমন নয়, তেমনই এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যার মধ্যে কোনও প্যাটার্ন নেই।

Source: https://www.bbc.com/bengali/news-54469273