‌ট্রামের কামরায় পাঠাগার – DW (বাংলা)

কলকাতা নিউজ

দূষণহীন যান হিসেবে ট্রামের কোনও বিকল্প নেই৷ ট্রামের সফর অন্যান্য গণ পরিবহণের তুলনায় বেশি আরামদায়ক৷ তার পরেও ট্রাম ধীরগতির যান, বাঁধা পথে চলে বলে যানজট বাড়ায়, ইত্যাদি নানা কারণে ব্যস্ত নগরজীবনে গুরুত্ব হারাতে শুরু করেছিল শতাব্দী-প্রাচীন এই গণ পরিবহণ ব্যবস্থা৷ মূলত ট্রাম কোম্পানির কর্মীদের কাজের নিরাপত্তা যাতে থাকে, সেজন্য চালু হয়েছিল বাস৷ বহু ট্রাম-কর্মীই নতুন করে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নতুন ধরনের কাজ রপ্ত করতে৷ কিন্তু কলকাতা শহরের সঙ্গে যেমন হাওড়া ব্রিজ, শহিদ মিনার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অচ্ছেদ্য সম্পর্ক, তেমনই তার হাতে–টানা রিকশ এবং ট্রাম৷ বিশ্বের হাতে গোনা কিছু শহরে যা এখনো সচল আছে৷

ট্রামের ভেতরের দৃশ্য

কাজেই ট্রামকে প্রাসঙ্গিক রাখার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে কিছু বছর হল৷ ময়দানের একটা সবুজে ভরা রুটে চালু হয়েছে রেস্তোরাঁ, ট্রামের কামরার ভেতরে এবং তা বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছে৷ সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন চলন্ত পাঠাগার, বুক্‌স অন হুইলস্‌৷

উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার থেকে মধ্য কলকাতার ধর্মতলা, বহু পুরনো এই ট্রাম-রুট গেছে কলকাতার বইপাড়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়, আরও একাধিক স্কুল–কলেজকে ছুঁয়ে৷ লেখক সুনীল গাঙ্গুলি যে স্কুলে পড়তেন, সেই টাউন স্কুল, স্কটিশ মিশনারিদের তৈরি স্কুল এবং কলেজ, বিখ্যাত বেথুন কলেজ, বিদ্যাসাগর কলেজ পেরিয়ে কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় হিন্দু এবং হেয়ার স্কুল, সংস্কৃত কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ, যা এখন স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়, তার পাশেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ৷ সবকটিই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান৷ এর পর ট্রাম যখন ঘোরে ধর্মতলার দিকে, তখনও পর পর কয়েকটি মিশনারি স্কুল৷ এই গোটা রাস্তাটা ধরে রোজ একাধিকবার যাতায়াত করবে এক কামরার একটি ট্রাম, যার অভ্যন্তর বদলে দেওয়া হয়েছে পাঠাগারে৷ বাতানুকূল এই কামরায় থাকছে ওয়াইফাই পরিষেবা, বসে বই দেখার ব্যবস্থা৷

রাজ্য পরিবহণ নিগমের আধিকারিক কৌশিক সরকার জানালেন, ‘‌‘‌ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার আমাদের যে রুটটা আছে, সেখানে তো প্রচুর স্কুল–কলেজ পড়ে;‌ সে কারণে আমরা বিভিন্ন যে পরীক্ষাগুলো আছে, (‌তার) কিছু বই, ধরুন‌রেফারেন্স বই বিভিন্ন, টেক্সট বই— এগুলোর জাস্ট একটা আইডিয়া দেওয়া৷ কালকে অনেকগুলো বই রাখা হয়েছে৷ আস্তে আস্তে ওটাকে আরও বাড়ানো হবে বিভিন্ন রেফারেন্স বই দিয়ে৷ এবং কিছু গল্পের বইও থাকবে৷’’

কৌশিকবাবুর কথায় জানা গেল, এটা আপাতত শুরু৷ মূলত আইএএস, ডাব্লিউ বি সি এস, ক্যাট, নেট, স্লেট ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার রেফারেন্স বই থাকবে৷ কিন্তু ভবিষ্যতে বইয়ের সংগ্রহ যেমন বাড়তে পারে, ঠিক তেমনই প্রসারিত হতে পারে এই চলমান পাঠাগার পরিষেবার ক্ষেত্র৷ আজকের দিনে রেফারেন্স বইয়ের দাম যখন অত্যধিক, সেসব বই যেখানে সব সময় সুলভও নয়, সেখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত, বা মধ্যবিত্ত ঘরের পড়ুয়ারা নিশ্চিত উপকৃত হবেন এই উদ্যোগে৷ পাশাপাশি কলকাতা শহরের ঐতিহ্য-যানটিও ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে৷

Source: https://www.dw.com/bn/%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A0%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B0/a-55054164