সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে
বর্ষা এ বার ইনিংসের সূচনা থেকেই চালিয়ে খেলছে। রবিবার কয়েক ঘণ্টার তুমুল বর্ষণে কার্যত ভেসে যায় কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রচুর বজ্রপাতও হয়েছে। গ্রীষ্মের ঝড়বৃষ্টিতে এমন বাজ পড়লেও বর্ষায় এত বজ্রপাত দেখা যায় না। কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এমন বৃষ্টি চলতে পারে বলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর, কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ নয়, কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের আকাশে একাধিক বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ সৃষ্টির ফলেই এই প্রবল বর্ষণ। এক-একটি মেঘপুঞ্জের উচ্চতা ছিল ৭-৯ কিলোমিটার। তার ফলেই ঘনঘন বাজ পড়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, কালবৈশাখীর সময় এমন বড় বড় মেঘ তৈরি হতে দেখা গেলেও বর্ষাকালে সচরাচর তা দেখা যায় না। আবহবিদদের একাংশের মতে, বায়ুমণ্ডলের নীচের ও উপরের স্তরে তাপমাত্রার অনেক ফারাক ছিল। তাই জলীয় বাষ্প দ্রুত ঘনীভূত হতে পেরেছে। জলীয় বাষ্পের জোগান অফুরন্ত, তাই মেঘের আকার বেড়েছে এবং বর্ষণ হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে।
এমন প্রবল বৃষ্টি কেন? গণেশবাবু জানান, মৌসুমি অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে দক্ষিণে আসছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ঢুকছে জোরালো মৌসুমি বায়ু। সেই জলীয় বাষ্পপূর্ণ হাওয়া অক্ষরেখার প্রভাবে দ্রুত ঘনীভূত হয়ে বজ্রমেঘ তৈরি করেছে।
মেঘপুঞ্জ তৈরির কারণ: • বায়ুমণ্ডলের নীচের ও উপরের স্তরের তাপমাত্রার ফারাক। তার উপরে মৌসুমি অক্ষরেখার টানে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে ওঠে। • কম তাপমাত্রার কারণে দ্রুত ঘনীভূত হয়ে মেঘপুঞ্জ তৈরি। প্রবল বৃষ্টির কারণ • অতিভারী মেঘপুঞ্জ বায়ুর টানে বেশি দূর যেতে পারেনি। তাই একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বৃষ্টি ঝরিয়েছে। • জলীয় বাষ্পের জোগান থাকায় ক্রমাগত মেঘ তৈরি হয়েছে। |
এ দিনের বৃষ্টির দাপট দেখে কেউ কেউ বলছেন, মেঘ যেন ভেঙে পড়েছিল! দমদম ক্যান্টনমেন্টের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা নাগাড়ে বৃষ্টি হল!’’ আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় অবশ্য একে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলা চলে না। যদিও বৃষ্টিতে বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আলিপুরে ১৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তবে শহরের অন্যত্র এবং শহরতলিতে বৃষ্টির মাত্রা ছিল অনেক বেশি। বৃষ্টি হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে। কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, নদিয়ার একাংশেও। দমদম পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ড, দমদম ক্যান্টনমেন্ট এবং শহরতলির অন্যান্য এলাকায় অনেক ঘরে ও দোকানে জল ঢুকেছে। পুলিশ জানায়, জল জমেছে দমদম, পাতিপুকুর আন্ডারপাস, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গাঁধী রোড, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, উত্তর বন্দর থানা লাগোয়া এলাকা, হাইল্যান্ড পার্ক ও অজয়নগর সার্ভিস রোডে। যে-ভাবে দমদম-সহ বিভিন্ন পুর এলাকায় জল জমেছে, তাতে পুর প্রশাসনের কাজ নিয়ে বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। অনেকেই বলছেন, নিকাশির সংস্কার হয়নি। তাই জল দ্রুত বেরোচ্ছে না। দুর্গানগরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এখন একটু বৃষ্টি হলেই এমন সব জায়গায় জল জমছে, যেখানে আগে জল জমতে দেখিনি।’’
আরও পড়ুন: গাছ বিক্রি নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির ‘গুলি-বোমা’, তপ্ত খেজুরি
এ বার কৃষিকাজে বর্ষার কৃপাদৃষ্টি রয়েছে। সেচে সঙ্কট নেই। তবে কেউ কেউ বলছেন, অল্প সময়ে প্রবল বৃষ্টি হলে তা ঘুরপথে আনাজের ক্ষতি করতে পারে। এমনিতেই আমপানের পরে আনাজের দাম বেড়েছে। চাষের ক্ষতি হলে তা আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণ মেলেনি, বাঁধের উপরেই ঘর বেঁধেছেন ওঁরা
শেয়ার করুন
শেয়ার করুন
সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে
আরও খবর
Source: https://www.anandabazar.com/state/thunderstorm-continued-for-long-time-derailed-normal-life-in-kolkata-1.1169023