সারা ভারতে করোনা ভাইরাসজনিত লকডাউন ঘোষণার দুই মাস পর আজ বৃহস্পতিবার প্রথম কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান চলাচল শুরু হল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটে দশটি বিমান রওনা হয়েছে, আর দশটি বিমান কলকাতায় নেমেছে। প্রথম দফায় দিল্লি থেকে ১২২ জন যাত্রী নিয়ে এয়ার এশিয়া সংস্থার একটি বিমান কলকাতায় অবতরণ করে। যদিও সারাদেশে গত সোমবার অর্থাৎ ২৫শে মে থেকেই অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুরোধ করেছিল এই রাজ্যে বিমান যাত্রা চালু করার দিন পিছিয়ে দিতে। কারণ, তখন ঘূর্ণিঝড় আম্পান নিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। তাই ২৮শে মে’র আগে কলকাতা বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব নয় বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী আজ কলকাতা থেকে এবং একইসঙ্গে বাগডোগরা থেকেও বিমান চলাচল শুরু হল।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগে থেকেই নির্দেশিকা জারি করেছিল যে প্রতিটি বিমানযাত্রীকে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিধি নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। যাত্রীদের মোবাইল ফোনে “আরোগ্য সেতু” অ্যাপ যদি না-ও থাকে, তাঁদের নিজেদের সুস্থতার প্রমাণ পত্র দাখিল করতে হবে এবং একটি ঘোষণাপত্র সই করে জমা দিতে হবে, যাতে লেখা থাকবে, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কোনও উপসর্গ যাত্রীর শরীরে নেই। এর পর কলকাতা বিমানবন্দরে যাত্রীরা নামলে তাঁদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। যাঁদের শরীরে কোনও উপসর্গ থাকবে না তাঁদের বাড়ি যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হবে, শুধু শর্ত থাকবে বাড়িতে পৌঁছে তাঁরা যেন ১৪ দিন সেল্ফ কোয়রেন্টিন বা স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি থাকেন। আর যাঁদের শরীরে কোনও রকম জ্বরের উপসর্গ সামান্য পরিমাণেও মিলবে, তাঁদের সরকারি চিকিৎসালয়ে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। যাঁদের বেশি মাত্রায় উপসর্গ থাকবে, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। ওদিকে গত সোম ও মঙ্গলবার দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু করার প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে ব্যাপক পরিমাণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল, যার ফলে বহু উড়ান বাতিল করতে হয়েছিল। বহু যাত্রী বিমানবন্দরে পৌঁছেও শেষ পর্যন্ত যাত্রা শুরু করতে পারেননি। তাই নিয়ে সারা দেশেই একটা সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সেই অবস্থাটা গতকাল বুধবার অর্থাৎ বিমান চলাচল শুরু হওয়ার তৃতীয় দিনে কিছুটা হলেও কেটেছে। বিমানমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন, বিমান চলাচলে নতুন করে আর বাধার সৃষ্টি হবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। তিনি আরোগ্য সেতু অ্যাপ নিয়েও বিভ্রান্তি কাটিয়ে বলেছেন, ওই অ্যাপটি থাকতেই হবে এমন কোনও কথা নেই। তবে থাকলে যাত্রীদের সুবিধা হবে, ভালো হবে। যদি না থাকে তা হলে কোনও সরকার অনুমোদিত ক্লিনিকে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে একটা ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে হবে। এ ছাড়া নিজে সেল্ফ ডিক্লারেশন বা একটি ঘোষণা পত্রে সই করে “আমার কোনও করোনা সংক্রান্ত উপসর্গ নেই” বলে বিমান যাত্রার আগে বিমান কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে। এর সবটাই করা হচ্ছে সম্পূর্ণ করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিধি নিয়ম মেনে।
দীপংকর চক্রবর্তী, ভয়েস অফ আমেরিকা, কলকাতা
Source: https://www.voabangla.com/a/india-coronavirus/5439155.html