সবুজ মরিয়া প্রমাণ করিল কলকাতা কত সবুজ ছিল – এই সময়

কলকাতা নিউজ

শ্যামগোপাল রায়

উম্পুনের তাণ্ডবে কলকাতা শহরে গাছ পড়েছে ১৫ হাজার। সেখানে, লাগোয়া দমদম পুর এলাকায় গাছ পড়েছে ৩৫০টি এবং অনেকে পুরোনো শহর হিসাবে পরিচিত বরাহনগরে ৪০০টি গাছ পড়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। কিন্তু, ওই এলাকায় তো ঝড়ের গতি কলকাতার থেকে কম ছিল না, তা হলে কেন এই পার্থক্য? পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাছ থাকলে তো পড়বে!

আসলে এই সমস্ত এলাকায় লোকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও গাছ সেভাবে বাড়েনি। আর জমানা নির্বিশেষে সরকার এবং পুরসভার উদ্যোগে বৃক্ষরোপনও তেমন হয়নি। সবজু যেটুকু আছে তা গৃহস্থ বাড়িতেই সীমাবদ্ধ, যেখানে আবার প্রোমোটারের থাবা বেশি। সব মিলিয়ে কলকাতা যেমন অনেক গাছ হারালো, তেমনই উম্পুনের সৌজন্যে স্পষ্ট হল শহরতলি এলাকা এমনিতেই কতটা সবুজহীন। এই পরিস্থিতিতে এই এলাকায় অবিলম্বে সবুজায়নের পরামর্শ দিচ্ছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

দমদম পুর এলাকায় প্রায় ২ লক্ষ লোকের বসবাস। বর্তমানে সেখানে লাফিয়ে বাড়ছে ফ্ল্যাট বাড়ির সংখ্যা, ফলে বাড়ছে লোকসংখ্যাও। অথচ, কলকাতা বিমানবন্দর লাগোয়া এই এলাকায় গাছের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার। পুর চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংও মানছেন, গাছের সংখ্যা কম। তিনি বলেন, ‘সবুজায়নের লক্ষ্যে আমরা পুর এলাকায় নতুন বাড়ি-আবাসন তৈরির ক্ষেত্রে গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করেছি।’ পাশেই দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় ঝড়ের জেরে পড়েছে ১২০০টি মতো গাছ। তবে এই এলাকাতেও জনসংখ্যার তুলনায় গাছের সংখ্যা বেশ কম। পরিসংখ্যান বলছে, এই পুর এলাকায় গাছের সংখ্যা ৫ হাজার। অথচ লোক বসবাস করেন ৬ লক্ষ।

গাছ কমের নিরিখে দক্ষিণ দমদমের মতো একই সারিতে রয়েছে বরাহনগরও। পুরসভা সূত্রে খবর, এই এলাকায় ৩ লক্ষ নাগরিক বাস করলেও, গাছের সংখ্যা ৪ হাজারের মতো। যদিও এই দুই পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর সদস্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ নারায়ণ বসু বলছেন, ‘কলকাতার তুলনায় আমাদের পুরসভা আয়তনে ছোট। সেই হিসাবে গাছের সংখ্যা ঠিক আছে। তা ছাড়া, লোকসংখ্যা বাড়ছে বলে আমরা সবুজায়নের দিকে অনেক বেশি জোর দিয়েছি।’ যদিও, এই যুক্তি মানতে নারাজ পরিবেশবিদরা। তাঁদের বক্তব্য, লোকসংখ্যার নিরিখে সবুজায়ন জরুরি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা ও টাউন প্লানিং বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জীব নাগের মন্তব্য, ‘কলকাতা লাগোয়া বরাহনগর, দমদম বা দক্ষিণ দমদম এলাকায় বছর ১৫ আগেও সবুজে ভরা ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই এলাকাগুলিতে পরিকল্পনা ছাড়াই উন্নয়ন হয়েছে। যার জেরেই কমেছে সবুজের পরিমাণ।’ পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘এই সমস্ত পুর এলাকায় যে গাছ কম লাগানো হয় এমন নয়। বরং যে গাছ লাগানো হচ্ছে তার যত্নে খামতি থেকে যায়। তাছাড়া, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে গাছ না-লাগানোয় কয়েক মাসের মধ্যেই সেই গাছ মরে যায়।’

Source: https://eisamay.indiatimes.com/west-bengal-news/kolkata-news/trees-destroyed-in-kolkata-due-to-amphan/articleshow/75990583.cms