জিনের প্রভাবে কি ভয় বেশি, বিতর্ক কলকাতার গবেষণায় – এই সময়

কলকাতা নিউজ

সাবেরী গুপ্ত

করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার সঙ্গে কি সরাসরি জিনের যোগ রয়েছে? নির্দিষ্ট জিন বৈচিত্রের জেরে কি কোভিড আক্রান্তের সঙ্কট বাড়ে? সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার সূত্র ধরে তেমন একটি বিষয় সামনে আসছে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধও রয়েছে। তবে অনেক গবেষকের মতে, মানব শরীরের একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের বৈচিত্রের জেরে অ্যালিলের (এক ধরনের জিন বলা যেতে পারে) প্রভেদে করোনায় আক্রান্তের পরিণতি কম বা বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অরূপরতন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যদের একটি গবেষণায় সম্প্রতি দাবি করা হয়েছে — এসিই ১ নামে নির্দিষ্ট একটি প্রোটিনের বৈচিত্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে করোনা সংক্রমণ ও তার ভয়াবহতা। কী ভাবে? গবেষকদের দাবি, টিস্যুর গঠনের ভিত্তিতে এসিই ১-এর জেনেটিক ইনসারশন বা ডিলিশন (আই কিংবা ডি) পলিমরফিজম হতে পারে। এই ডি অ্যালিলের সঙ্গে কিছু কো-মর্বিডিটির যোগ রয়েছে। যেমন হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, ক্যান্সার, হার্ট ফেলিয়োর ইত্যাদি। তাই এর জেরে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন এই গবেষকরা। এশিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস জার্নালে এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে এ মাসের গোড়ায়।

অরূপরতন বলছেন, ‘এ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, ইউরোপীয়দের মধ্যে ডি অ্যালিলের অস্তিত্ব বেশি। এমনটা হতেই পারে যে সেই কারণে সেখানে করোনার ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার বেশি। উল্টোদিকে ভারতীয়দের শরীরে ডি-এর বদলে আই-এর অস্তিত্ব বেশি। ইউরোপের তুলনায় ভয়াবহতা কম হওয়ার এটিও একটি কারণ হতে পারে।’

এ বছর মার্চে অন্য একটি জার্নালে প্রকাশিত বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রেও ডি অ্যালিলের প্রসঙ্গ উঠে আসে।তা হলে কি এই দুই অ্যালিলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে করোনা সংক্রমণের যোগ রয়েছে? বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে নানা মত পোষণ করছেন। আমেদাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অকুপেশনাল হেলথে অধিকর্তা কমলেশ সরকার যেমন বলছেন, ‘এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে তো কিছু বলা হচ্ছে না এখনও। তবে জিনগত বিষয়কে একেবারে উড়িয়ে না-দিলেও এখনই এমন প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা মেনে নেওয়া মুশকিল। যার শরীরে ভাইরাস ঢুকছে, তার শারীরিক গঠনের পাশাপাশি ভাইরাসের গঠনের উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। তা ছাড়া ভারতে বিসিজি ভ্যাকসিন, ম্যালেরিয়া-সহ নানা অসুখের ওষুধ খাওয়া, প্রবল গরম ইত্যাদি কারণও দায়ী হতে পারে। তাই এ ভাবে এখনই কিছু বলা কঠিন।’ রাজ্যের অন্যতম বিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বায়োটেকনোলজির অধ্যাপকও অনেকটা এ কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘এ রকম তত্ত্ব দিয়ে শুধু প্রভাব পড়ার কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু কীসে প্রভাব বেশি বা কম সেটা বলা খুব কঠিন। তার জন্য যে পরিমাণ স্যাম্পল সাইজ নিয়ে গবেষণা দরকার, সেটা এখনও করা সম্ভব হয়েছে কি না জানি না।’

তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক সাগরময় ঘোষের কথায়, ‘বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ ও তার জেরে মৃত্যুর হারে ফারাক রয়েছে। এমনকী আমেরিকাতেও সংক্রমণের হার এক এক প্রদেশে এক এক রকম। তাই জিনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী করোনার প্রভাব কম বা বেশি হতেই পারে।’

অরূপরতন নিজেও এ ব্যাপারে আরও গবেষণার পক্ষপাতী। তবে ডি কিংবা আই অ্যালিলের ভিত্তিতে চিকিৎসার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে তিনি জানান। তাঁর কথায়, ‘কোনও করোনা আক্রান্তের শরীরে ডি অ্যালিল বেশি থাকলে তাঁর চিকিৎসায় অনেক বেশি জোর দেওয়া দরকার। কারণ সে ক্ষেত্রে ভয়াবহতার আশঙ্কা বেশি।’

Source: https://eisamay.indiatimes.com/west-bengal-news/kolkata-news/has-genetic-structure-anything-to-do-with-corona-infection-scientists-of-kolkata-raise-question/articleshow/75819118.cms