সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেউ চালালেন জমিতে কোদাল, কেউবা ঘুরে ঘুরে দেখলেন কী অবস্থায় রয়েছে নিজের জমি
- Share this:
#কলকাতা : টানা একমাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন। জনজীবন স্তব্ধ। তিলোত্তমা যেন গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে। সবচেয়ে অসহায় অবস্থা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর। হাতে কাজ নেই। পেটে খিদে থাকলেও ভাত নেই। এক অসম্ভব লড়াই চালাতে চালাতে ওঁরাও আজ ক্লান্ত। করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় রীতিমতো বেসামাল অবস্থা। কিন্তু কীভাবে ঘুঁচবে পেটের জ্বালা? প্রশ্ন থাকলেও উত্তর এখনও অজানা।
এদিকে শর্তসাপেক্ষে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ের সরকারি ঘোষণার পর অনেকেরই উদ্বেগ এখনও কাটেনি। আর সেই উদ্বেগকে সঙ্গী করেই সুরক্ষা বিধি মেনে ওঁরা আজ পেটের জ্বালা মেটাতে কাজে যোগ দিলেন। প্রতিটি পদে পদে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিপদ। জানে ওঁরা। তবুও যে, পেট বড় বালাই। তাই সামাজিক দূরত্ব মেনে চাষের কাজে নামলেন কলকাতার কৃষকরা। বর্তমানে কার্যত অচল কলকাতার বুকে এ যেন এক অন্য কলকাতা। চাষের কাজে নামা এক কৃষক পিন্টু মাজির কথায়, ‘ অনেকদিন হাত গুটিয়ে বসে ছিলাম। রোজগার পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে উঠেছিল। ভয় থাকলেও কী আর করব। পেট তো চালাতে হবে, সে কারণেই মাঠে কাজে ফিরলাম’। অপর একজন রেনু নস্করের বক্তব্য, ‘৩০ বছর ধরে শাকসবজি চাষ করেই আমাদের সংসার চলে। চাষের কাজ না করলে খাব কী?’ এই কথা শুধু যে রেনু দেবীর গলাতেই শোনা গেল তা নয়। তাঁর মতো অনেকেরই আজ রোজগার বলতে এই মাঠে শাক সবজির ফলন এবং তা বিক্রি করার মাধ্যমে যে আয় হয় তা থেকেই। তাই করোনা ভয় থাকলেও তাকে উপেক্ষা করেই একপ্রকার নিরুপায় হয়েই ওঁরা কাজে ফিরলেন।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেউ চালালেন জমিতে কোদাল, কেউবা ঘুরে ঘুরে দেখলেন কী অবস্থায় রয়েছে নিজের জমি। অনেকেই আবার পুরোদমে শুরু করে দিলেন চাষের কাজ। শহর কলকাতার লাইফলাইন বাইপাস। যার দুই প্রান্তে অজস্র বহুতল মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। আর তারই কোলে যেন শুয়ে থাকা ধাপা মাঠপুকুর সংলগ্ন বিয়ের পর বিঘে চাষের জমি যেন কিছুটা প্রাণ ফিরে পেল। ভুট্টা, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির ফলন কলকাতা সহ আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন বাজারে এখান থেকে পৌঁছয়। একদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক আর অন্যদিকে লকডাউন। রুজি রুটি হারিয়ে দিন কাটছে চরম সংকটে। দীর্ঘদিন কৃষি কাজ বন্ধ থাকায় আয়ও নেই। পেটে খিদে নিয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান করা কৃষকরা এবার কৃষিজমিতে সুরক্ষা বিধি মেনেই নামলেন চাষের কাজে। কাজ না থাকায় খাবারের যোগানও ছিল না। আর্থিক সামর্থও ছিল না। সবমিলিয়ে বিপন্ন শহরের কৃষকরা।
কৃষি জমিকে আঁকড়ে ধরেই ওদের জীবন। জুটছে না দুবেলা-দুমুঠো খাবার। পরিবারের শিশু সন্তানদের মুখে নিয়মিত তুলে দিতে পারছেন না খাবার। কীভাবে চলবে সংসার? ভেবেই দিশেহারা কৃষকরা। লকডাউনের অনেক আগেই জমিতে লাগানো লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল জমিতেই নষ্ট হয়েছে। লকডাউনে এখন টিকে থাকার লড়াই । বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। যে লড়াইয়ে ঝুঁকি আছে। তবে নিরুপায় হয়েই ক্ষয়ক্ষতির হিসেব-নিকেশ ভুলে ওঁরা আবার নতুনভাবে পথ চলা শুরু করলেন। চারিদিকে নিস্তব্ধতা । হঠাৎ যেন কেমন ঘুমিয়ে পড়েছে তিলোত্তমা। শুনশান রাস্তাঘাট ।দোকানপাট বন্ধ। চেনা শহরটার ছবি হঠাৎ কেমন যেন অচেনা হয়ে গেছে। এরই মাঝে এ এক অন্য কলকাতার ছবি। যে চাষের জমি এতদিন ছিল নিষ্প্রাণ। আজ তা কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। যে প্রাণ অনেকেরই পেট ভরাবে। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাবে।
VENKATESWAR LAHIRI
First published:
May 1, 2020, 7:35 PM IST
পুরো খবর পড়ুন
Source: https://bengali.news18.com/news/kolkata/agricultural-works-resumed-in-kolkata-rm-445049.html