ছোট্ট মেয়েকে গ্রামে রেখেই করোনার লড়াইয়ে মা-বাবা – Anandabazar Patrika

কলকাতা নিউজ
Coronavirus in Kolkata: Parents are on emergency duty, daughter is living with others – Anandabazar

  • মেহবুব কাদের চৌধুরী

সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে

পরিবার: বাবা-মা ও দিদির সঙ্গে ছোট্ট অর্ণা পাহাড়ি।

একে লকডাউন, তার উপরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা-সংক্রমণ। তবু বাড়িতে বসে থাকার উপায় নেই তাঁদের। কারণ, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই রয়েছেন জরুরি পরিষেবায়। চার বছরের ছোট্ট মেয়েটিকে তাই বাধ্য হয়েই পাঠিয়ে দিতে হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি সংলগ্ন গ্রামের বাড়িতে। ছুটি নেওয়া সম্ভব নয় বলে নিজেরা অবশ্য যেতে পারেননি। একরত্তি সেই মেয়েটির বাবা কলকাতা পুলিশের আধিকারিক। মা এক বেসরকারি হাসপাতালের নার্স। এই পরিস্থিতিতে ব্যস্ততা তুঙ্গে দু’জনেরই।

মা-বাবাকে ছেড়ে এত দিন কোথাও থাকেনি সেই মেয়ে। তাকে সামলাতে তাই হিমশিম খাচ্ছেন তার ঠাকুরদা, জেঠা ও কাকারা। টানা এক মাস বাবা-মাকে দেখতে না পেয়ে বেজায় মন খারাপ কন্যার। দাদুর কোলে বসেও মাঝেমধ্যেই ডুকরে কেঁদে উঠছে সে।

কর্তব্যে অবিচল বাবা-মা অবশ্য এই কঠিন সময়েও ছুটি নেওয়ার কথা ভাবছেন না। লকডাউনের শহরে দুঃস্থ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সব কাজেই রয়েছে পুলিশ। আবার করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে হাসপাতালের নার্সদের কাজের চাপও এখন বহু গুণ বেড়েছে।

আরও পড়ুন: মুক্তিপণ চেয়ে ফোন, মিলল নিখোঁজ কিশোরের দেহ

গ্রামের বাড়িতে গিয়ে প্রথম দিকে খেলে বেড়ালেও দিন যত এগিয়েছে, মা-বাবার জন্য মন খারাপও তত বেড়েছে দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নার্সারির পড়ুয়া অর্ণা পাহাড়ির। এখন আর কিছুতেই বাবা-মাকে ছেড়ে থাকতে চাইছে না সে। ঠাকুরমা আগেই মারা গিয়েছেন। কাঁথির একান্নবর্তী পরিবারে জেঠা, কাকা ও ঠাকুরদা রয়েছেন। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরের দিন অর্ণার সঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া দিদি সুবর্ণাও গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: বিঘ্ন যাত্রাতেও, শুরুই হয়নি মহরতের প্রস্তুতি

বাবা স্বরূপকান্তি পাহাড়ি কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার ওসি। তাঁর কথায়, ‘‘কী করব বলুন! বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরের দিনই দুই মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছি।’’ বর্তমানে বালিগঞ্জের পুলিশ আবাসনে থাকেন তাঁরা। স্বরূপকান্তিবাবুর কথায়, ‘‘লকডাউনের জেরে কাজের চাপ অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় থানাতেই বেশির ভাগ সময় কাটাতে হচ্ছে। আমার স্ত্রী বিপাশা আইসিইউ-তে কর্মরত। তাই ওঁরও কাজের খুব চাপ।’’ তিনি বলেন, ‘‘ছোট মেয়েটার জন্যই বেশি চিন্তা। টানা এক মাস ও আমাদের ছেড়ে এই ভাবে কখনও থাকেনি। খুব দেখতে ইচ্ছে করলে ভিডিয়ো কল করি। আবার ভিডিয়ো কলে কথা বললে ও খুব কাঁদতে থাকে। আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে খুব। সারা ক্ষণই ওর চিন্তা মাথার ঘোরে।’’

থানায় নিজের চেম্বারে বসে মেয়ের কথা বলতে বলতে চোখ চিকচিক করে উঠল ওসি-র। এর মধ্যেই তাঁর ঘরে ঢুকলেন জনা তিনেক সাব ইনস্পেক্টর। বাইরে দুঃস্থ মানুষেরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের হাতে চাল, ডাল, আলু, সর্ষের তেল, সাবান তুলে দিতে হবে। চোখ মুছতে মুছতেই সে কাজে উঠে গেলেন থানার বড়বাবু।

শেয়ার করুন

শেয়ার করুন

সবাই যা পড়ছেন

সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে

আরও পড়ুন

আরও খবর

সবাই যা পড়ছেন

আরও পড়ুন

Source: https://www.anandabazar.com/calcutta/coronavirus-in-kolkata-parents-are-on-emergency-duty-daughter-is-living-with-others-1.1141268