লকডাউনের প্রথম সকালে কলকাতা প্রায় জনশূন্য, গ্রেফতার ২৫৫ – Anandabazar Patrika

কলকাতা নিউজ
CoronaVirus in India: LockDown is implemented over Kolkata and Most Part of the State dgtl – Anandabazar

  • নিজস্ব সংবাদদাতা

সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে

করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে জনশূন্য কলকাতার রাজপথ—নিজস্ব চিত্র

লকডাউনে স্তব্ধ কলকাতা-সহ কার্যত গোটা রাজ্য। করোনাভাইরাসে গোষ্ঠীসংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে শুক্রবার মধ্যরাত অবধি লাগু থাকবে লকডাউন।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলকাতার রাজপথের ছবি হার মানাবে যে কোনও ধর্মঘটকে। নেই সরকারি বা বেসরকারি কোনওরকম গণপরিবহণ। শুধু জরুরি পরিষেবার গাড়ি এবং তাদের কর্মী ছাড়া আর কোনও যানবাহন শহরের পথে এদিন বিরল। এমনকি, বসেনি বেশিরভাগ বাজারও।

তবে যে সব বাজার খুলেছে সেগুলোতে ভিড় যথেষ্টই চোখে পড়ছে এ দিন। সরকারের তরফে বার বার বলা হয়েছে খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে যেন কেউ না বেরোন।  কিন্তু তার পরেও যে ভাবে বাজারে ঘেঁষাঘেষি করে জিনিসপত্র কিনছেন তাতে সামাজিক দূরত্ব রাজ্যবাসীরা কতটা মানছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এ দিন বাজারে এসেছিলেন রাজা রায়। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, সামাজিক দূরত্ব রাখার কথা বলা হচ্ছে, বাজারে এই ভিড়ে কতটা নিরাপদ মনে করছেন? রাজা বলেন, “ সোমবার বাজারে যে পরিমাণে ভিড় ছিল তাতে কোন কিছুই কিনতে পারিনি। আজ তাই আবার এসেছি। কিছু করার নেই। খেতে হলে কিছু তো করতেই হবে!”

ঠিক একই রকম ভিড় দেখা গিয়েছে মুদি দোকানগুলোতে। সেখানে জিনিস কিনছিলেন শুভ দাস। তিনি মশলা, চাল, ডাল এবং পেঁয়াজ নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য,  “রবিবার ভিড়ের জন্য কিছু করতে পারিনি। আজ সব শাক-সবজির এক লাফে ২০-৩০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। পেঁয়াজ ৩৫ টাকার নীচে পাওয়া যাচ্ছে না। চাল কেজি প্রতি ৫-৬ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। লাইন দিয়ে মাল কিনতে হচ্ছে। তবে যতটা পারছি দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি।”

অন্য দিকে, বকুলতলায় সুফল বাংলা স্টলে পেঁয়াজ, আলু নির্দিষ্ট দামেই বিক্রি হয়েছে। তবে মানুষে তাতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, বাজারে যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো এর থেকে ভাল। সুফল বাংলা স্টলে পেয়াজ ২২ টাকা, আলু ১৮ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এই স্টলেই এ দিন পেয়াজ কিনতে এসেছিলেন এক প্রৌঢ়।  মুখে মাস্ক ঢাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রৌঢ় বলেন, “সুফল বাংলা থেকেই পেঁয়াজ নিচ্ছি। কিন্তু বাজারের থেকে এই পেঁয়াজ মোটেই ভাল নয়। কিন্তু ভিড় এড়াতে বাধ্য হয়ে এখান থেকে নিচ্ছি।”

মাছের দামও এক লাফে বেড়ে গিয়েছে। বাটা মাছের কেজি প্রতি ২৫০ টাকা। গঙ্গার মাছও অল্প পরিমাণে এসেছে। তা-ও চড়া দাম। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, সরবরাহ না থাকলে মাছের দাম আরও বাড়তে পারে।

অন্য দিকে, জনশূন্য রাজপথে চলছে পুলিশের নাকা চেকিং। জরুরি পরিষেবা এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংক্রান্ত না হলে খতিয়ে দেখা হচ্ছে প্রত্যেকটি গাড়ি। নিতান্ত জরুরি দরকার ছাড়া আইন ভেঙে অযথা পথে নামলেই কড়া পদক্ষেপ করছে পুলিশ। টালা পার্ক, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস, ইএম বাইপাস-সহ শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চলছে পুলিশি টহল।

কলকাতার পুলিশ সুপার অনুজ শর্মা টুইট করে জানিয়েছেন আইন ভাঙার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫৫ জনকে। তিনি জনগণের কাছে ঘরে থাকার আবেদন করেছেন।

 

আইন ভাঙলেই কড়া পদক্ষেপ করবে পুলিশ—নিজস্ব চিত্র

লকডাউন বা তালাবন্দি মানে যে ছুটি নয়, সেই বার্তাই দিচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রশাসন। তাই ছুটির মেজাজে পথেঘাটে ভিড় জমালে বা হুল্লোড় করলে নিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে সোমবারই নির্দেশিকা দিয়েছিল সরকার।

আরও পড়ুন: এক দিনে রেকর্ড আক্রান্ত, দেশে মৃত্যু বেড়ে ৯

তবে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ‘লকডাউন’ শব্দটি বলা হয়নি। বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে গোষ্ঠীসংক্রমণ ঠেকাতে ‘সার্বিক সুরক্ষা বিধিনিষেধ’ (কমপ্লিট সেফটি রেসট্রিকশন্স) চালু করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। কলকাতা পুর এলাকা, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, পশ্চিম বর্ধমানে পুরোপুরি এবং বাছাই করা জেলা শহরে এই ‘লকডাউন’ সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে ২৭ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। সল্টলেক, নিউ টাউন-সহ উত্তর ২৪ পরগনার সমস্ত পুর-শহরেও একই নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

আরও পড়ুন: রাস্তায় হুল্লোড় করলে হবে জেল, জরিমানা

নির্দেশিকা অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা, আদালত, জেল, স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিধিনিষেধ থাকবে না। বিদ্যুৎ, জল, জঞ্জাল পরিষ্কার, অগ্নিনির্বাপণ, অসামরিক প্রতিরক্ষা, টেলিকম, ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি, ডাকঘর পরিষেবা, ব্যাঙ্ক-এটিএম, গণবণ্টন ব্যবস্থা চালু থাকবে। আনাজ, মাছ মাংস, দুধ, ফলের মতো আবশ্যিক খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের অনলাইন বাজার এবং হোম-ডেলিভারিও নিষেধাজ্ঞার বাইরে। পেট্রোল পাম্প, গ্যাস, তেল, ওষুধ পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে। যে দ্রব্যগুলির উৎপাদন বন্ধ করা যাবে না, সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের অনুমোদন সাপেক্ষে সেই কাজ চালানো যাবে। জরুরি পরিষেবা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জেলাশাসক অথবা পুর কমিশনার। সংবাদমাধ্যমের পরিষেবাও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। 

জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন গণপরিবহণ এ দিন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল, আন্তঃরাজ্য বাস পরিবহণ, ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। 

শেয়ার করুন

শেয়ার করুন

সবাই যা পড়ছেন

সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে

আরও পড়ুন

আরও খবর

সবাই যা পড়ছেন

আরও পড়ুন

Source: https://www.anandabazar.com/state/coronavirus-in-india-lockdown-is-implemented-over-kolkata-and-most-part-of-the-state-dgtl-1.1126601