মাস্কে মুখ ঢেকে ক্রমশ ঘরবন্দি হচ্ছে কলকাতা – এই সময়

কলকাতা নিউজ
শহরের কোথাও সেই ভিড় চোখে পড়েনিশহরের কোথাও সেই ভিড় চোখে পড়েনি
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: করোনাভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পেতে ভিড় এড়ানোর পরামর্শ ছড়িয়ে পড়ার পরে শহরের মগজে যেন অঘোষিত কার্ফু! গড়িয়াহাটের মোড়, রাসবিহারী ক্রসিং, এসপ্ল্যানেড বাস স্ট্যান্ড, শ্যামবাজারের মোড়— সবই ফাঁকা ফাঁকা। বাসে-ট্রামে-অটো-ট্রেনে অনেকের মুখ মাস্কে ঢাকা। সৌজন্যে, কোভিড-১৯!

শহরের এই অবস্থা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন অনেকে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার আতঙ্কে শহরে বাইরের লোক আসা অনেক কমে গিয়েছে। তাঁদের হিসেবে, কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় সব মিলিয়ে পঞ্চাশ লক্ষ লোক বসবাস করেন। তার উপরে প্রতি দিন বাইরে থেকে হরেক দরকারে কোটিখানেক লোক আসেন। সব মিলিয়ে প্রতি দিন কলকাতায় গড়ে দেড় কোটি লোকের আনাগোনা চলে। কিন্তু এদিন শহরের কোথাও সেই ভিড় চোখে পড়েনি।

এই পরিস্থিতি সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছে বাংলা বছর শেষের চৈত্র সেলের বাজারে। পসরা সাজিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, হাতিবাগানের হকারেরা। এই তিন এলাকার রাস্তা দিয়ে চৈত্র সেলের মরসুমে হাঁটাই দায় হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে স্বচ্ছন্দেই যাচ্ছেন হাতে গোনা পথচারীরা। নিউ মার্কেটের হকার ইমরান আলির কথায়, ‘সব শেষ করে দিল দাদা। চৈত্র সেলে দুটো পয়সা পেতাম। কে কিনবে, শহরে তো লোকই আসছে না!’

হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন, কোলে মার্কেটের মতো ব্যস্ত এলাকাতেও গিজগিজে ভিড় ছিল না এদিন। শিয়ালদহের ফুটপাথে সব্জি বেচেন শিমূরালির পুঁচাই চাকলাদার। আড়াইটে নাগাদ ওই এলাকার একটি হোটেলে খেতে ঢুকেছিলেন। ভাত আর রুই মাছের বিল মিলিয়ে হয়েছিল ৬০ টাকা। ট্যাঁক থেকে ১০০০ টাকার একটা নোট দিতেই হোটেল মালিক সনাতন সরকার তাঁর উপরে চটে গেলেন। সনাতনের কথায়, ‘বেচা-কেনা নেই। তাই খুচরো নেই। রোজ যেখানে আড়াইটার মধ্যে ২০০ থালা ভাত বেচি, সেখানে এখন পর্যন্ত ২৭ থালা বেচেছি।’

মেট্রোতেও এদিন ভিড় হয়নি। অনেক যাত্রীর মুখই ছিল মাস্কে ঢাকা। মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, একদিনে তাঁদের দেড় লক্ষ যাত্রী কমেছে। প্রভাব পড়েছে দূরপাল্লার ট্রেনেও। বাতিল করা হয়েছে একাধিক ট্রেন।

এদিন পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের বাসে ভিড় কমাতে বিভিন্ন রুটে নামানো হয়েছে অতিরিক্ত বাস, সরকারি লঞ্চ। টার্মিনাসেই সরকারি বাস ও ট্রামে এবং লঞ্চ ঘাটে স্যানিটাইজার দিয়ে যাত্রীদের হাত পরিষ্কার করালেন নিগমের কর্মীরা। পাশাপাশি, শহরজুড়েই নিগম বাস স্ট্যান্ড ও টার্মিনাসগুলিতে করোনা নিয়ে গুজব ও আতঙ্কের বিরুদ্ধে বিশেষ প্রচারাভিযান শুরু করে দিল নিগম। স্টেট ট্রান্সপোর্ট অথরিটি(এসটিএ) ও জেলায় আরটিও’রা বেসরকারি বাস, মিনিবাস মালিকদের সঙ্গেও বৈঠক করলেন। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘আমরা চালক ও কন্ডাক্টারদের মাস্ক দিতে চাই। কিন্তু বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়াও তাদের স্যানিটাইজার না-দেওয়া গেলেও বলছি সাবান ব্যবহার করতে।’ এদিন এসএন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পুরসভার সদর কার্যালয়েও ভিড় কম ছিল। জন্ম-মৃত্যু শংসাপত্র বিভাগে প্রতি দিন যেখানে ভিড় উপচে পড়ে সেখানেও হাজির ছিল হাতেগোনা লোক।

আরও পড়ুন:
পারফিউমের বদলে স্যানিটাইজার ল্যুই ভিতঁদের

Source: https://eisamay.indiatimes.com/west-bengal-news/kolkata-news/kolkata-news-public-transports-are-not-crowed-due-to-corona/articleshow/74683919.cms